মেহরাব রহমান, টরন্টো
আমি যোগী সন্ন্যাসী হবো।
বৈরী হাওয়ায় বিবাগী পুরুষ;
আমি এক গৈরিক বুদ্ধ হবো।
অন্ধকার কিংবা আলোকরেখার কাছে
বিন¤্র বিনয়ী হবো।
কারও কারও অন্তর অতলে উত্তপ্ত লাভা;
তাই এতো চিৎকার,
তাই এতো বেদনা,
তাই এক প্রেম দুই হাওয়া;
এক নদী দুই চাওয়া।
মেঘ জমে জমে, মেঘ জমে জমে
অপূর্ব আকাশ ছাই হয় প্রতিদিন।
মানুষেরা কথা শোনেনা, অন্তর পড়েনা
কী কথা লোকেদের সাথে।
এখন শুদ্ধিকরনের পালা,
এখন পরিবর্তনের সঠিক সময়।
আমি বধি বৃক্ষের নীচে বসে দিলকোরান
পড়বো, যীশুর মর্মে দাঁড়িয়ে বাইবেল পাঠ,
আর মসজিদ অথবা মন্দিরে অবনত চিত্তে ত্রিপিটক পড়বো।
আমি যীশু হবো;
ক্রুশবিদ্ধ হবোনা, রক্তে রক্তে প্লাবিত করবোনা
জেরুজালেম, গোলগোথার নির্জন প্রান্তর।
আমি অলৌকিক বাতাস, অনন্ত যীশু হবো ।
বুদ্ধ, বুদ্ধ আমি অনির্বাণ গৌতম বুদ্ধ হবো ।
এই জপমন্ত্র হবে হৃদপি-ের অপূর্ব তাবিজ:
‘বুদ্ধম শরণম গচ্ছামি’
সমর্পিত হবো সর্বোত্তম বুদ্ধিমত্তার কাছে।
বুঝবো কোনটা ন্যায় কোনটা অন্যায়
‘সংঘম শরণম গচ্ছামি’
সমাজের কাছে সমর্পণ করবো আপন সত্ত্বা।
নিজ সুখ বিসর্জনে তুলে নেবো যন্ত্রণার কাঁটা।
‘ধম্মম শরণম গচ্ছামি’
একমাত্র ধর্ম :
মানুষ হবো শুধুই মানুষ।
এই ত্রিবেণী বাণী নিয়ে
চলবো অন্তহীন আকাশলোকে।
আমি অমৃত লালন হবো;
আচানক পাগল হবো।
নিজেকে চিনবো;
তারপর অচেনাকে।
আমি অন্তর্লোকের অবিনশ্বর রবীন্দ্রনাথ হবো।
অস্থির অজগর গিলে খাচ্ছে সভ্যতা।
নষ্ট পোকামাকড়, ভ্রষ্ট সময়
কুরে খাচ্ছে প্রযুক্তির মগজ।
পুড়ছে শহর, নগর, বন্দর।
সুন্দরী পৃথিবীর বন্ধনির হুক ছিঁড়ে ফেলে
উত্তেজিত সূর্যপুরুষ;
শাড়ির আঁচল পোড়ায় নির্লজ্জ রোদ্দুরে।
খামচে ধরে নাকের নোলক,
উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে বস্ত্রহরণ করে,
এরপর দাবানল ধর্ষণ এবং উন্মাদ নৃত্য।
সত্যের লেবাস এঁটে ধর্মের উগ্র মস্তানরা
রক্তপতাকা উড়ায় ঝুলন্ত আকাশে।
রাতের সুনসান শান্ত অন্ধকার কাঁদে
নিরব যন্ত্রণায়।
কাঁদে বিস্তীর্ণ বনভূম,
সাগর, নদী, পাহাড়,
মানবিক মানব এবং প্রকৃতি।
তাই আমি নিশ্চয়ই ভবের পাগল হবো;
লালন হবো।
অমিয় যীশু হবো
অবশ্যই, অবশ্যই রবি রবীন্দ্রনাথ,
জ্ঞানতাপস গৌতম বুদ্ধ হবো।
আমি প্রস্তুত;
প্রস্তুত এক নুতন অলৌকিক যাত্রায়।
শ্মশানের গণগণে আগুণে
পুড়িয়েছি দীর্ঘ অতীত।
ছাই ভস্ম সব ডুবিয়েছি গঙ্গায়।
উপড়ে ফেলেছি ভবিষৎ;
ভাসিয়েছি ভেলা নিরুদ্দেশ যাত্রায়।
এখন বর্তমানের এক বিন্দুতে দাঁড়িয়ে
অনুভব করি
আমার আমির ভেতর ঈশ্বর,
আরাধ্য প্রকৃতি, তুমি, তোমরা;
সবাই বিশ্ব আমির মধ্যে একাকার।
আমার গলায় রুদ্রাক্ষের মালা;
তার প্রতিটি রক্তাভ প্রকোষ্ঠে লেখা আছে
আমার গুরুর মন্ত্রবাণী;
নানা তারে বাজে,
নানা মূর্ছনায়,
নানা রাগে বাঁধা:
আলোকের এই ঝর্ণাধারায় ধুইয়ে দাও।
আপনাকে এই লুকিয়ে রাখা
ধুলার ঢাকা ধুইয়ে দাও
যে জন আমার মাঝে জড়িয়ে আছে ঘুমের জালে
আজ এই সকালে ধীরে ধীরে তার কপালে
এই অরুণ আলোর সোনার কাঠি ছুঁইয়ে দাও।
বিশ্বহৃদয় হতে ধাওয়া
আলোয় পাগল প্রভাত হাওয়া,
সেই হাওয়াতে হৃদয় আমার নুইয়ে দাও
আমি অন্তর্লোকের অন্তর্যামী রবীন্দ্রনাথের
এই অমৃত বাণীর দ্রাক্ষারস
ঢেলে দেব ঈর্ষার উত্তাপে।
যুদ্ধের আয়োজনে দেব
হিমশীতল চিকিৎসা জল।
আমি শক্তি সঞ্চয় করবো;
সেই জ্ঞান বৃক্ষ
অনির্বান গৌতম বুদ্ধের কাছে।
নেভাবো সকল ক্রুদ্ধ আগুনের লেলীহান শিখা।
আমার নীল ধমনীর প্রতিটি রক্তকণায়,
যখন নিমগ্ন প্রার্থনা;
তখন দেহের কোনো ভার নাই
বুকের কোনো ব্যথা নাই
বাতাসে ভাসছি আমি
বাহিরে ঝড় ভেতরে শান্ত নদী
চলে নিরবধি।
জল পড়ে পাতা নড়ে
জল তরঙ্গ বাজে
টুং টাং টাং টুং টাং
আরাধ্য আরাধনায় আমি তখন
অবিনশ্বর ঈশ্বর।
পাঠ করি আমার গহন গহীনে
“বুদ্ধম শরণম গচ্ছামি”
“ধম্মম শরণম গচ্ছামি”
“সংঘম শরণম গচ্ছামি”
“বুদ্ধম শরণম গচ্ছামি”
“ধম্মম শরণম গচ্ছামি”
“সংঘম শরণম গচ্ছামি”
“বুদ্ধম শরণম গচ্ছামি”
“ধম্মম শরণম গচ্ছামি”
“সংঘম শরণম গচ্ছামি”
সূচনা কাল :
২৩ মার্চ ২০১৭
সকাল ৮ টা
প্রকাশ কাল : রাত ১টা, ৬ এপ্রিল ২০১৭