মেহরাব রহমান
ভয় লাগে বোশেখী ঝড়
ঘন কালো রাত
নদীর একূল অকূল
বুকের ভেতর ভাঙনের শব্দ
অশনি সংকেত
দূর প্রান্তরে পারাপার নৌকাগুলো
ছায়া কাঁপে
আকাশে তাণ্ডব লীলা
সুতীক্ষ্ণ জলকাটা শব্দ
বাতাসে মিলায় মাঝিদের ডাক
আল্লাহু আকবার
এ অন্ধকার ঝড় রাতে আমি একা
আমার হলুদ দেহ-জমিন
নৌকার গোলই ও পাটাতন
স্বর্ণাভ চিকন হাত দাঁড়ি বেয়ে যায়
মনটা জোড়াতালি দেয়া
এক নানাবর্ণ পাল
পালে লাগে দুষ্টু হাওয়া
এই বুঝি ডুবে যায়
ছিন্ন হয় পাল
পূর্ব থেকে পালে হাওয়া
দক্ষিণ হাওয়াও টানে
নৌকাটা বেসামাল
কোন দিকে যাবে সে ?
কখনো ছুটে যায় দক্ষিণে
কখনো গা ভাসায় পূর্ব হাওয়ায়
ভয় হয় জোড়াতালি পাল যদি
ছিঁড়ে হয় খানখান
বোশেখী ঝড় বড় ভয় ভয়
ঘন কালো নদী
নৌকাটা বেসামাল
হায় ! হায় ! ডুবে যাবে চিরতরে ?
না না তা কী করে হয় ?
এখন আমরা সকলে জানি
আমাদের জীবন এক যুদ্ধক্ষেত্র
আজকের বৈশাখ খুব বিবর্ণ
অভিশপ্ত পৃথিবী
আমাদের সকলের বুকের গহনে
স্বজন হারাবার বিমর্ষ ক্রন্দন
মৃত্যু
মৃত্য
মৃত্যু আর মৃত্যুর কারবার
আমাদের রাত্রিদিন ঘিরে থাকে
ছায়ার মতন
বিশ বিশ সন
সর্প দংশন
রাক্ষুসে ব্যাধি করোনা কভিড-উনিশ
বিষাক্ত বিষ
গিলে খাচ্ছে
নীল বিষ
নীল নামহীন সাপ ; অভিশাপ
ভয় নেই
আমরা নির্ভিক
সাহসী নাবিক
চড়াই-উৎরাই জোয়ার-ভাটা
তান্ডব উন্মাতাল বোশেখী ঝড়
আবার বৈঠা হাতে ভাসাবো তরণী
জীবনের আনন্দ ভেলা
উজানে ভাসাবো
আবার যখন শান্ত নদী
প্রশান্ত সাগর
নতুন সূর্যের অলৌকিক আলোতে
প্লাবিত হবে চরাচর
হবে পটে আঁকা
জলরং তেলরং
শিল্পীর সদ্য প্রসূত ছবি
আবার নববর্ষের বৈশাখী মেলা হবে
নুতন সাজে সাজবে ভুবন
বাঙালি ললনার পরনে হবে
এক প্যাঁচে লালরঙা জামদানি শাড়ি
খোঁপায় গোঁজা শুভ্র বেল ফুলের মালা
কপালে সূ্র্যলাল রাঙানো টিপ
হবে বৈশাখী মেলার
কোলাহল চারিদিকে
বাংলা নববর্ষে
আবার আনন্দ উৎসব
আমাদের পৃথিবী
তখন ভাসবে পুত-পবিত্র জোয়ার জলে
শুভ্র—সুন্দর—কল্যাণময় প্রভাতে
পাখিদের গানে গানে
এক আনন্দভূবন
বাজবে আবার
তাধিন তাধিন আনন্দ ভৈরবী
তাতাথৈ তাতাথৈ …
তাতাথৈ তাতাথৈ …