জহিরুল চৌধুরী নিউইয়র্ক, ৫ই মে ২০২০
এদের নাম উচ্চারণ না করলে অকৃতজ্ঞতা হবে। অগণিত নাম না জানা তরুণ-যুবক দেশে-বিদেশে মানবতার সেবায় ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। এরা আপন মহিমায় ভাস্বর। আমি দেশে থাকলে এদের অনুগামী হয়ে সেই সম্মান ও তৃপ্তির ভাগীদার হতাম। জাহাঙ্গীর ভাইকে @Jahangir Nakir আমি চিনি প্রায় তিন দশক। বাবা-মাকে নিয়ে থাকতেন শ্রীমঙ্গলের চা গবেষণা কেন্দ্রে। বাবা সেখানেই চাকরি করতেন। জাহাঙ্গীর তখন পড়তেন শ্রীমঙ্গল কলেজে। সেই কলেজেরই ছাত্র সংসদের নেতা।পড়াশুনার পাশাপাশি চা বাগানের শ্রমিকদের সংগঠিত করতেন। আশির দশকে আমি চবি’র ছাত্র আন্দোলনের সংগঠক হিসেবে গিয়েছিলাম শ্রীমঙ্গল। সেখানেই পুরো দিন, রাত জাহাঙ্গীরের সঙ্গে ছিলাম। শুনেছিলাম চা বাগানের শ্রমিকদের রোগ, শোক, দারিদ্র ও স্বপ্ন-সংগ্রামের কথা। জাহাঙ্গীর তাদের বহু আন্দোলন সংগ্রাম সংগঠিত করেছিলেন। সকারী পরিচালক হিসাবে চাকরি করছেন আহছানিয়া মিশনের চিলড্রেন সিটি’তে। পথশিশুদের স্বপ্ন দেখাবার দায়িত্ব নিয়েছেন। আবার স্ট্রিট চিল্ড্রেন এক্টিভিস্টস নেটওয়ার্ক এর সভাপতি তিনি। চবিয়ান হিসেবে আমার সঙ্গে এখনো তাঁর ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ।
কোনো মানুষ যদি নিঃস্বার্থভাবে মানুষের সেবা করতে চায়, আমি মনে করি তাদের জন্য জ্বলন্ত উদাহরণ এই মানুষটি। সে এমনই। আমায়ার প্রিয় একজন জাহাঙ্গীর ভাই। আদর্শিক দৃঢ়তা সরল মনের মানুষ। আন্দোলন সংগ্রামেও দেখেছি তাকে সামনের কাতারে।আজ আবার দেশের দূর্দিনে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন তিনি।রাজধানী ঢাকার অলিগলিতে, আপাদমস্তক পিপিই জড়িয়ে মোটরসাইকেলে ছুটে চলেছেন। গড়ে তুলেছেন মানবতার সেবায় সংগঠন। নাম দিয়েছেন ‘যেখানে অনাহারী সেখানেই আমরা’। নিশ্চয় তারসঙ্গে আরো কিছু মহৎপ্রাণ মানুষ আছেন!জাহাঙ্গীর ভাইয়ের সহযোগী জনি হাসান @Joni Hasan একটি স্টেটাসে বলেছেন- “মধ্যবিত্তের চাপা কান্না কেউ শুনতে পায়না। করোনা আতঙ্কে সারা দেশে লক ডাউনের জন্য অসংখ্য মানুষ কর্মহীন আছে আর এই কর্মহীনতায় আর সবার মতো মধ্যবিত্ত মানুষেরাও চরম দুর্ভোগে জীবনযাপন করছে। প্রতিনিয়ত বিভিন্ন মানুষের আহাজারি – আর্তনাদ বেড়েই চলছে এই রকম হাজারো মানুষ আজ এই দুর্যোগে চরম দুর্ভোগে জীবনযাপন করছে।
তেমনি সেদিন জনসেবা সংস্থার মাধ্যমে খবর পেয়ে মোহাম্মদপুরের পুলপাড় এলাকায় বসবাস করা ভদ্র লোকটির সাথে যোগাযোগ করলে ফোনে তার কর্মহীনতা ও চরম খাদ্য সংকটের কথা বলতে বলতে কান্না করছিলেন। সংসারের একমাত্র কর্মক্ষম ব্যক্তি তিনি পরিস্থিতির কারনে তাকে আজ সন্তানদের নিয়ে না খেয়ে দিন যাপন করতে হচ্ছে অথচ কারো কাছে লজ্জায় বলতে ও পারছে না। তাদের প্রতি সম্মান রেখেই আজ #যেখানে_অনাহারী_সেখানেই_আমরা নামক কর্মসূচির মাধ্যমে লোকটিকে সহায়তা করতে পারলাম l আমিনবাজার হিজলা গ্রামের ৯ম শ্রেণির ছাত্রীর মর্মস্পর্শী আব্বদন অগ্রাহ্য করতে পারেন নি। অসুস্থ শরীরে ছুটে গেছেন খাবার নিয়ে। টোলারবাগ সম্পুর্ন লকডাউনে এক নিম্ন আয়ের শিক্ষিকার বাসায় ছুটে গেছেন খাবার দিতে।ধন্যবাদ জানাই সেইসব হৃদয়বান মানুষদের যাদের সহায়তায় এই কার্যক্রম চলমান রয়েছে l আপনাদের সহায়তা এইসব মানুষদের কাছে ভালোবাসার উপহার হয়ে পৌঁছে যাচ্ছে।
#যেখানে_অনাহারী_সেখানেই_আমরা”সুলতান আহমেদ Sultan Ahmed আরেকটি স্টেটাসে বলেছেন-“অগ্রজ Jahangir Nakir এর পোস্টটা দেখে কষ্টের দলা বুকে জমাট বেঁধেছিলো। তাও আমাদের কামরাঙ্গীর চরে। আলীনগর। আমাদের এক সহযোদ্ধা Jony Hasan খোঁজ নিয়ে ঘটনাটি সত্য জানান। পরিবারটির প্রধানের কম্পিউটারের দোকান। এখন বন্ধ। তিন বছরের শিশু সন্তান। দুধ শেষ। খাবারের কথা বলাই বাহুল্য।ছেলেটিকে আসতে বললাম। কিছু খাবার আর একটা দুধের প্যাকেট কিনে দেওয়ার পর বাবার মুখে যে স্বর্গীয় হাসি তা কোনো মূল্যে মিলবেনা।
#মানুষের জন্য মানুষ #যেখানে অনাহারী সেখানেই
আমরা খাদ্য সহায়তা আর অনির্বচনীয় অনুভূতিকে সঙ্গী করে এগিয়ে চলছেন।প্রদীপ ঘোষ নামে আরেক সতীর্থ চিত্র পরিচালক তার ওয়ালে লিখেছেন- “করোনা মহামারীতেও মানবতার টানে ছুটে চলা একজন চবিয়ান।কে না খেয়ে আছে? খাবার পৌঁছে দেয়া।স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে এ দায়িত্ব পালন করছেন আমাদের চবিয়ান সমাজতত্ত্ব বিভাগের ২২তম ব্যাচ এর জাহাঙ্গীর নাকির। আমি গর্বিত জাহাঙ্গির ভাই। এই অবরুদ্ধ ঢাকা শহরে আপনারা আছেন। নিজেকে সাবধানে রাখবেন।”আমি মাত্র কয়েকটি ঘটনার কথা উল্লেখ করলাম। মানুষ মানুষের জন্য।মানুষ যখন মানুষের পাশে দাঁড়ায় তখন নিজস্ব লাভক্ষতির হিসাব করে না। মানুষ দাঁড়ায় নিজের তাগিদে। সেই সব মানুষেরাই মানবতার ইতিহাসে অমরত্ব লাভ করে। অনাগত ভবিষ্যত জানতেও চায় না তার ধর্ম-দর্শন কিংবা সামাজিক অবস্থান। “লকডাউন” একটি বাড়িতে খাবার পৌছে দিয়ে এসেছেন মানবতার আরেক অবতার শামীম আহমেদ। জাহাংগীর নাকিরের একটা পোষ্ট দেখে একজন নারী জানালেন বাসায় কোনো খাবার নাই।রোজা রাখবেন কি করে? ওনাদের বিল্ডিংটা লকডাউন।তাই খাবারের জন্য বাহিরেও বের হতে পারছেন না।তিনি বলেন, ওনাকে ঐ রাতেই পৌছে দিলাম কিছু খাদ্য সামগ্রী।এই কাজটা করতে পারাতে নিজের কাছে ভালো লাগছে।অাসুন না,সবাই যার যার অবস্হান থেকে অসহায় মানুষের জন্য কিছু করি।বেশি কিছু না করতে পারলেও অন্তত কিছু খাবার দেয়ার চেষ্টা করি।