উম্মে শায়লা রুমকী লেখক, ফিজিক্যাল থেরাপি পরামর্শক পিটিআরসি, ঢাকা
পৃথিবীর সকল মা যেমন হয়,মায়াবতী,স্নেহময়ী,সন্তানদের সুখের জন্য আত্মত্যাগী,আমার মা ও ব্যতিক্রম নয়।ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষ করার ব্রত ছিলো তাঁর। নিজেদের পায়ে দাঁড়ানোর জন্য লড়াই করার মন্ত্র মা আমাদের শিখিয়েছেন।
মাকে কখনো বোঝার চেষ্টা করেছি,কিংবা সচেতন ভাবে ভেবেছি সেরকম মনে পড়ে না।কিন্তু আজকাল যখন আয়ানের, নিজের সন্তানের ভালোমন্দ নিয়ে ভাবি,তখন মায়ের আদর,বকা,কষ্ট,আনন্দ সব বুঝতে পারি।প্রতিদিন কাজে, ভাবনায়,চিন্তায়,আশায় যিঁনি জড়িয়ে থাকেন রেশমি পরশে, তিঁনি আমার মা।
মা হলো একজন উদ্যোক্তা।ছোটবেলায় দেখতাম,বাড়ির আশেপাশে অল্প জায়গা হলেই তাতে কৃষি ফলাতেন,ফুল ফোটাতেন।বাবার চাকুরির কারনে শহরে শহরে ঘুরতে হতো।মাকে দেখেছি তিনফুটের এক বারান্দায় কি পরম যত্নে নাইট কুইন ফোটাতেন,শিম লতায় বারান্দা ভরে যেতো!
আমাদের জন্য নিজের হাতে জামা সেলাই করতেন,বাসায় সোফার কভার,ডাইনিং ক্লথ,শীতে উলের টুপি এমনকি ডিমের খোঁসায় রঙ করার কাজটাও মা করতেন যত্নের সাথে।নতুন নতুন জিনিস শেখার ব্যাপারে মা অসাধারন।
কারো বাড়িতে কোনো রান্না বা গৃহসূচি পছন্দ হলে তিঁনি বাসায় এসে প্রাকটিস করতেন।বসে থাকতে পছন্দ করেন না।
মাত্র ত্রিশ বছরের দিকে প্রথম ডায়বেটিক ধরা পড়েছে। এই রোগটা তখনও মানুষের কাছে পরিচিত নয়,কত রকম মানা,বিধিনিষেধ,ইনসুলিন নেওয়া।আমার মা চ্যালেন্জ হিসাবে নিলেন,ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রন করে কাটিয়ে দিচ্ছেন পঁচিশ বছর!ছেলেমেয়েদের সর্বোচ্চ একাডেমিক শিক্ষা দিলেন,কাউকে গান,কাউকে নাচ শেখালেন।সবাই মোটামুটি একসময় নাচ, গান,বির্তক,অাবৃত্তি করতাম টেলিভিশনে,ভাইটা নতুন কুঁড়ি অব্দি গিয়েছিলো!সবই মায়ের অক্লান্ত পরিশ্রম আর চেষ্টা।
তিঁনি চার ছেলেমেয়ে,দুই নাতি নাতনিকে বড় করে, আব্বুর রিটায়ারের পর নিজ শহরে বাড়ি করলেন।দুজনই হজ্ব করে এখন বাড়িতে থাকেন।গৃহকর্মী ছাড়াই পুরো সংসার ম্যানেজ করছেন এই বয়সে!!
মায়ের সব চেয়ে বড় গুন,নতুন কিছু শেখার ব্যাপারে অদম্য আগ্রহ।এখনো ইউটিউব দেখে নতুন নতুন রান্না শেখেন,কেমন করে গাছ লাগাতে হয়,হাঁস মুরগির যত্ন,কত কি!!
এই বয়সে এসে মায়ের বাড়ির ছাদ ফুলে, ফলে ভরপুর।ছোট্র একটা পুকুর ভর্তি মাছ,আম, জাম কাঁঠাল,লিচু সফেদা,পেঁপে কি নাই!!জবা,গোলাপ,হাসনাহেনা,এরোমেটিক জুঁই কি লাগবে!!হাঁস,মুরগি,কুকুর, বেড়াল কি চাই!!
ছেলেমেয়েরা দূরে দূরে থাকে!ম্যাসেন্জার, স্কাইপে,হোয়াটস আপে কথা হয়!তাই ভালো থাকার জন্য নিজের জগত গড়ে নিয়েছেন।মা আমাদের শিখিয়েছেন,পরিস্হিতি যাই হোক,বেঁচে থাকার জন্য, ভালো থাকার জন্য অবিরত কাজ করে যেতে হবে।যা তোমাকে আনন্দ দেয়,সেই কাজ বেছে নাও।
সেদিন ভিষন মন খারাপ হলে,মাকে ফোন করে বললাম,মা লোকেরা কেবল কাজের ভুল ধরে,ভালো লাগে না।মা হেসে বললো,নিজেকে চীনের মতন করে তৈরি করো,ট্রাম্প যেনো ভয় পায়!ছোটবেলা থেকেই দেখতাম,মা সব কাজ শেষ করে খবর শুনতেন।ভয়েস অব বাংলা,বিবিসি প্রবাহ ছিলো তাঁর প্রিয় অনুষ্ঠান!বইপড়া, গান শোনা ভিষন প্রিয়।মা,ভালো থেকো।নিজের যত্ন নিও।আমাদের আজ যা কিছু সবই তোমার অবদান!!আজকের দিনে তোমার জন্য অনেক অনেক শুভ কামনা।