শাহানা আকতার মহুয়া,ভ্যাঙ্কুভার,কানাডা।
বাঙালি জীবনে নানা উৎসব থাকলেও বাঙালি মুসলমানের জীবনে ধর্মীয় উৎসব হাতেগোনা। ঈদে, বিশেষ করে রোজার ঈদটা হয় খুব উৎসবমুখর। বাংলাদেশে যৌথ পরিবারে হৈ হৈ করে কর্মক্লান্ত হয়ে অনেক মানুষ নিয়ে ঈদ পালন করতাম। ভ্যাঙ্কুভারে আসার পরেও তার ব্যত্যয় হয়নি।
যদিও প্রবাসের ঈদ একটু অন্যরকম। এখানে ঈদের ছুটি নেই, আগের দিন পর্যন্ত কাজ করে, সন্ধ্যায় ঘরে ফিরে রান্নার জোগাড়যন্ত করে নিয়ে রান্না শেষ করতে করতে ভোর হয়ে যায়। দেশে থাকতেও অন্তত ঈদের দিন বাইরে যাওয়া হতো না কারণ নামাজ শেষ হবার পর থেকেই আত্মীয়-স্বজন, অতিথিরা আসত। আপ্যায়ন করতে করতে দিন শেষ হয়ে যেতো। আমার বাবার বাড়ি খুব কাছে, মা মন খারাপ করতেন বলে রাতে আমার ননদ-জা সহ যাকে যাকে পারি নিয়ে বাবার বাড়ি যেতাম দেখা করতে।
ভ্যাঙ্কুভারে আসার পরেও ঈদের দিনে বাইরে যাই না। বাড়িতেই অনেক অতিথি আসে, কলিগরা আসে, আড্ডা হয়। প্রতি ঈদে মূলত চেনা,স্বল্পচেনা নতুন অভিবাসী পরিবারদের নিয়ে ঈদ করি। হয়তো সেটাই প্রবাসে তাদের প্রথম ঈদ, হয়তো এখনো সেভাবে সেটেলড হয়নি, বেশি মানুষের সাথে চেনাজানা হয়নি, একা পরিবার নিয়ে ঈদ করতে গিয়ে দেশের সবার জন্য মন কেমন করবে, কান্নাকাটি করবে… তাই বৃহৎ পরিবারের মতো অনেককে নিয়ে দারুণভাবে ঈদের আনন্দ উদযাপন করি। আমার বাসাতেই অনেকে একে অন্যের সাথে পরিচিত হয়, বন্ধুত্ব গড়ে তোলে, জেনে যায় যে তারা একা নয়। গল্পে-আড্ডায় মাঝরাত গড়িয়ে যায়। সবকিছু গুছিয়ে ক্লান্ত শরীরে অদ্ভূত ভাললাগা নিয়ে ভোররাতে ঘুমাতে যাই।
এবার সবারই ঈদ হবে করোনাবন্দী। এমন ঈদ কখনো আসেনি যেন এ পৃথিবীতে। না, এই ঈদে কিছুই করবো না, যাবো না কোথাও। দেশ থেকে ভাই-বোন, বাবা-মা প্রতি ঈদেই ফোন দেন, এবারো তাদের সাথে কথা হবে। করোনা শুরুর পর থেকে চেষ্টা করছি দেশে যথাসাধ্য সহায়তা দিতে। প্রতি ঈদে কেনাকাটা করতাম পরিবারের সদস্যদের জন্য, বন্ধু-বান্ধবদের জন্য। এবার সব এক করে দেশে পাঠিয়েছি। এই সহযোগিতা থেকে পোলাও না হোক, অনেকগুলো মানুষের মুখ যদি ভাত ওঠে, সেটাই হবে আমার করোনারুদ্ধ ঈদের আনন্দ।