আকতার হোসেন ,টরন্টো,কানাডা।
ঈদ মানে আনন্দ বা উৎসব। এবার না হয় ঘরে বসে নিজের পছন্দ মত আনন্দ করুন। আকাশে উড়তে থাকা মেঘ দেখেও আনন্দ পাওয়া যায়। আবার অন্যের মুখে হাসি নেই সেটা ভেবে তার জন্য আনন্দ কামনা করেও আনন্দ পাওয়া যায়। এ বছর ঈদের আনন্দ হতে পারে অতীতের অনেকগুলো ঈদ ঠিকঠাক মত করতে পারার কৃতজ্ঞতা বোধ। হতে পারে, হারানো দিনের গান শোনার মত আনন্দ।
তবে, এই প্রথম নয়। এমন নিরানন্দ ঈদ আগেও এসেছিল আমাদের জীবনে। ১৯৭০ সালে খুব কম লোকই ঈদ উদযাপন করেছিল। কেননা প্রায় দশ লাখ লোক মারা গিয়েছিল ১২ নভেম্বরের ঘূর্ণিঝড়ে। পরের বছর অর্থাৎ একাত্তরের ঈদ হয়েছিল শনিবার, ২০ নভেম্বর। শহীদ জননী জাহানারা ইমাম লিখেছিলেন, ‘আজ ঈদ। বাসায় কোন আয়োজন করা হয় নি। কারোর জন্য নতুন কাপড় কেনা হয়নি। টেবিলে কোন আতর রাখা হয়নি’। মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত বিজয় এসেছিল ঈদের পর পরবর্তী একমাস শেষ হবার আগেই। কাজেই বুঝতেই পারছেন রণাঙ্গন তখন কিরকম উত্তেজিত ছিল। রোজার একমাসেও মৃত্যুর মিছিল থামে নি। অনেক জানা অজানা বাঙালির সাথে এই দিনে ‘বীর উত্তম’ আশফাকুস সামাদ শহীদ নয়। ‘মুক্তিযোদ্ধারা ২০ নভেম্বর রাতে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর শক্ত ঘাঁটি রায়গঞ্জ আক্রমণ করে। কিন্তু শত্রুর প্রতি-আক্রমণে বিপর্যস্ত কোম্পানির সৈনিকদের নিরাপদ অবস্থানে সরে যাবার জন্য আশফাকুস সামাদ নিজে মেশিনগান চালনা করতে থাকেন। তাঁর সৈনিকরা কাভারিং ফায়ারের সাহায্যে নিরাপদ স্থানে সরে যেতে সক্ষম হয়। কিন্তু এ সময়ে তিনি মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে শাহাদত বরণ করেন’।
ঈদ মুসলমানদের ধর্মীয় উৎসব হলেও বাংলাদেশে সকল ধর্মের লোক ঈদের আনন্দ ভোগ করতো। কিন্তু ১৯৭১ সালে এক কোটি লোক ছিল শরণার্থী ক্যাম্পে, সেদিন তাদের কোন আনন্দ ছিল না।। মুসলিম বিশ্বের কাছে পাকিস্তান এই দিন আবারও প্রচার করলো মুক্তিবাহিনীর নামে একদল বিদ্রোহী পাকিস্তান নামক মুসলিম দেশের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। এদিকে বঙ্গবন্ধুকে ফাঁসিতে মৃত্যুদণ্ড দেবার পায়তারা চালাচ্ছিল পাকিস্তান মিলিটারি সরকার। এই খবর বাঙালিদের মন থেকে আনন্দ উড়িয়ে দিয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ এক বার্তায় বললেন, রক্তের বিনিময়ে দেশের স্বাধীনতার জন্য লড়ছে আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধারা। ‘আমাদের জীবন থেকে ঈদের আনন্দ মুছে গেছে’। জয় বাংলা পত্রিকা সম্পাদকীয়তে লিখেছিল, ‘উৎসবের ঈদ নয়, ত্যাগের ঈদ’ স্বাধীন বাংলা বেতার থেকে রূপা ফরহাদ গাইলেন ‘চাঁদ ফিরে যাও.. দেখো মানুষের খুনে খুনে রক্তিম বাংলা, রূপালি আঁচল রাখবে কোথায় বলো’ সেবার ঈদের দিন অস্ত্রাগার পাহারার দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল আমাকে। গুলি ভর্তি রাইফেল হাতে আট-দশ ঘণ্টা দাঁড়িয়ে ডিউটি দিয়েছিলাম। ডিউটি শেষে বালতি থেকে উঠিয়ে দেওয়া এক মগ ডাল আর একটা আটার রুটি খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। সেদিন চোখ গড়িয়ে পানি পড়েছিল শুধু এতটুকু মনে আছে। এখন মনে হচ্ছে সেটাও একটা আনন্দ ছিল।