সাঈদ তারেক
রিষ্কটা কি একটু বেশী নেয়া হয়ে গেল না! সনাক্তের হার যখন দশ পার্সেন্ট তখনই আমরা সবকিছু খুলে দেয়ার সাহস পাই নাই, এখন বিশের ওপরে- এখনই সব ওপেন করে দেয়ার সময় হলো! আর দুইটা সপ্তাহ একটু কঠিন হলে কি অসুবিধা ছিল! ঈদে বাড়ী যাওয়া উপলক্ষে মানুষ যার যার জায়গায় স্থিত হয়েছিল। কয়েকটা দিন চলার সঙ্গতিও ছিল। দুই সপ্তাহের কারফিউ নিদেনপক্ষে কমপ্লিট লকডাউন দিলে প্রথম সপ্তাহটা এমনিতেই কেটে যেতো পরের সপ্তাহ একটু টেনেটুনে চালিয়ে নেয়াও অসম্ভব হতো না। তাতে মানুষ কিছুটা স্বস্তিবোধ করতে পারতো। অন্তত: গন সংক্রমনের আশংকা থেকে কিছুটা রেহাই পাওয়া যেতো!
আমি দেখলাম সোস্যাল মিডিয়া থেকে শুরু করে বিভিন্ন গনমাধ্যম, টিভি টক শো’ আলোচনায় লেখালেখিতে স্বাস্থ্যসংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা প্রায় সবাই একবাক্যে আরও কিছুদিন শক্ত ব্যবস্থা চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে মতামত রাখছিলেন। কিন্তু সরকার মনে করেছে খুলে দিলে সমস্যা নাই। নানা নির্দেশনা দিয়ে রবিবার থেকে অফিস আদালত চালু করার প্রজ্ঞাপন জারী করেছে। হতে পারে সরকারের কাছে তথ্য আছে ওপেন করে দিলেও সংক্রমন বা মৃত্যুহার বাড়বে না। তেমন হলে খুবই ভাল কথা। অথবা ভেবে দেখেছে লকডাউন দিয়ে আর কি লাভ, কেউ তো তা মানে না! অথবা লকডাউন বা কারফিউ জারী করলে তা এনফোর্সমেন্টের ব্যপারে শত ভাগ নিশ্চিত হতে পারে নাই।
কারন যাই হোক, এটা সত্যি একটা দেশ অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থবির হয়ে থাকতে পারে না। যাদের কাজ করে খেতে হয় তারাও মাসের পর মাস ঘরে বসে থাকতে পারে না। তাছাড়া কোটী কোটী মানুষকে মাসের পর মাস ত্রান বা সাহায্য দিয়ে বাঁচিয়ে রাখাও সম্ভব না। করোনা যা করুক ধীরে ধীরে আমাদেরকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতেই হবে। এক মাস আগেই আমি এ ব্যপারে লিখেছিলাম, বলেছিলাম খুলে দেয়ার পরিকল্পনা বানাতে হবে, প্লান টু রিওপেন। কিন্তু পরবর্তীকালে দেখা গেল কোনরূপ প্লান প্রগ্রাম অর্থাৎ কোন ধাপের পর কোন ধাপ- এসব ঠিক না করেই এটাওটা খুলে দেয়া হচ্ছে । ফলে সাধারন ছুটির কাংখিত ফল আমরা পেলাম না।
সবচেয়ে বড় কথা জনগোষ্ঠীর এক বিপুল অংশকে আমরা আজ পর্যন্ত করোনার গুরুত্ব উপলব্ধি করাতে পারি নাই, এই রোগ যে কতটা ভয়ংকর মানুষকে তা বোঝাতে ব্যর্থ হয়েছি। আমাদের যত প্রচারণা পত্র-পত্রিকা রেডিও টেলিভিশনে। বাণী-বচন টক শো’ আলোচনা সবই ওই চারকোনা বাক্সে। সাধারন মানুষ ওসব পড়ে না দেখে না শোনেও না। অনেকের দেখার সুযোগ নাই সময় নাই অনেকের আগ্রহও নাই। করোনা আলোচনা শোনার চাইতে অনেকে শাকিব খানের সিনেমা দেখে বেশী মজা পায়। এ্যান্ড্রয়েড ফোনের মাধ্যমে সোস্যাল মিডিয়া মুলত: তরুন যুবকদের হাতে। তারা সেখানে নানা কাজে ব্যস্ত থাকে। গনমাধ্যমে তিন মাসের অবিরাম প্রচারণায় যেটা হয়েছে- নগরকেন্দ্রিক মধ্যবিত্ত শ্রেণীটি আতংকগ্রস্থ হয়ে পড়েছে, উদ্বেগ উৎকন্ঠা ভয় থেকে অনেকে মানষিক বিকারগ্রস্থ হয়ে পড়েছে। টেনশনে ইমিউন ফল করায় এরাই পজিটিভ হয়ে যাচ্ছে। জনসচেনতা বাড়াতে প্রথম থেকেই সকল রাজনৈতিক সামাজিক ধর্মীয় সংগঠন, এনজিওগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করে মাঠে নামানো গেলে মানুষের কাছে মেসেজটা গুরুত্ব সহকারে পৌঁছুতো। কিন্তু সরকার সে পথে হাঁটে নাই।টানা নয় সপ্তাহ জগাখিচুরি অবস্থা। না ছুটি না লকডাউন না স্বাভাবিক অবস্থা। এ পরিস্থিতিতে রোববার থেকে নতুন বিধি-বিধান। কতটুকু মানা হবে তা বলাই বাহুল্য। তারপরও আশা করবো ভালই যেন হয়। এমন যেন না হয়- দুই সপ্তাহ পর আবার ছুটি আবার লকডাউনে যেতে হচ্ছে। এমন যেন বলতে না হয়- তখনই কেন কারফিউ দিলাম না!