এবিএম সালেহ উদ্দীন
১.
দুঃখগুলো
এখন আর ঘরে থাকে না ।
পথে-বিপথে,অরণ্যগুহায় রাত্রি কাটায় ।
শহর,বন্দর, নগর, গ্রাম থেকে প্রত্যাখ্যাত হয়ে
বাসা খোঁজে গির্জায় ,মসজিদে,মন্দিরে ।
যাত্রীবাহী নৌযান কিংবা সমুদ্র তরঙ্গে
আঁচড়ে মরে উথাল পাতাল
রেল লাইনের বস্তিপাড়া,পতিতালয় থেকে
ভাঙ্গা দালানের চাতাল হয়ে লাফিয়ে পড়ে চলন্ত ট্রেনে ।
মাঝে মাঝে হাঁড়-কাঁপানো শীতে
ওরা ঠাঁই নেয় ছেঁড়া কম্বলে ।
দু:খগুলো ঘরে থাকে না—
মরুভূমির ঝড়ের মতো মিশে যায় ফিলিস্তিনে
বাতাসের সাথে লীন হয় রক্তাভ মেঘমালায় ।
অবরুদ্ধ কাশ্মীরি শিশুর মতো
কাঁটাতারে ঝুলে থাকা ফেলানির মতো
লাশ হয়ে পড়ে থাকে পথেঘাটে ।
কখনো
রাজন,রাকিব আর সোহাগী জাহান তনুর মতো
ফাইলবন্দী পড়ে থাকে বিচারকের কাঠগড়ায় !
দু:খগুলো ঘরে থাকে না—
কাদা-নর্দমায় মাখামাখিতে জলাংজলা অন্ধকারে
ওরা ঘুমোতে যায় ওভারব্রিজের নীচে
কতদিন,কতরাত গীটারধ্বনিতে বেদনার সুর হয় । কখনো
লোহার ছেঁকা খেয়ে পড়ে থাকে মেঝেতে
ফোঁসকা-ফোড়ার যন্ত্রণায় পোড়াদেহ হাড্ডিসাড়
আবর্জনায় পড়ে থাকা বিষ্পায়িত কুয়াশায়
রোহিঙ্গার ক্ষুধাতুর শিশুর মতো
দু:খগুলো বেওয়ারিশ লাশ হয় !
২.
একদিন সাদাপুলিশের কান্ড দ্যাখে
জড়ো হয় পিপীলিকা ।
জংঙ্গলাকীর্ণ হিংসালয় থেকে অহংকারের কালচে আভায়
হিংস্রপুলিশ মারছিল কৃষাঙ্গ মানুষ ।
যুগযুগ ধরে কষ্টনির্যাস সংক্ষুব্ধতায়
লুথার কিং,ম্যান্ডেলা ও মাইকেল জ্যাকসনের
বক্ষ থেকে উঠে আসা
সিসুলু ,আবিলভার, চে গুভেয়ারা, ভিক্টর জারার মতো
তরুণদলের পদভারে কম্পমান রাজপথ ।
সড়ক মহাসড়ক,মাঠঘাট,রাষ্ট্রীয় প্রাসাদসহ
শহরে শহরে ছেয়ে যায় পিপীলিকার দল ।
অন্যদিকে
আব্রাহামের পায়ের তলা দিয়ে দুষ্টরা পালাতে থাকে
স্বচ্ছকাঁচের জানালায় তা দ্যাখে
কেউ কেউ রাত্রি কাঁটায় বাঙ্কারে ।
এভাবেই
দিক-দিগন্তের হাওয়ায় হাওয়ায়
দু:খগুলো ছড়িয়ে যায় বিশ্বময়…