জসিম মল্লিক,টরন্টো কানাডা।
বাবাদের নিয়ে তেমন কথা হয় না। একসময় বাবারা খুউব একা হয়ে যায়। একা হতে হতে একদিন শূন্যে মিলায়। সন্তানক্ষুধা বাবাদের যে কত তীব্র এই কথাটা কেউই প্রায় বোঝে না। মায়ের কাছে সন্তানেরা যতটা স্বচ্ছন্দ, অকপট বাবাদের কাছে ততটা না। আমার সন্তানেরা তার মায়ের সাথে প্রতিদিন কথা বলে, মায়েরা অনেক কিছু খুঁটিয়ে জানতে চায়। কিন্তু বাবারা তেমন না।
আমার বাবা মারা গেছেন আমার দু’ বছর বয়সে। মানুষ নাকি ইচ্ছে করলে তার জন্মমুহূর্তও মনে করতে পারে। আমি ন্যাংটো হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছি , নাকের জ্বলে, চোখের জ্বলে পড়ে আছি মাটিতে, মা ঘরের কাজ নিয়ে ব্যস্ত, সাজু কখনো আমাকে একটু কোলে নিয়ে পাড়ায় ঘুরতে বের হয়, মা অনেকক্ষন পর এসে একটু আঁচলে নাক মুখ মুছে দেয়। মাকে বাবা বলছেন, দেখেছো তোমার ছেলেটা কেমন জিদ্দী আর অভিমানী! তারপর বাবা আমার হাতে লজেন্স গুজে দেন। এই পর্যন্ত অস্পস্ট চোখে ভাসে। হয়ত এটা একটা কল্পনা।আমি নিজেও এখন বাবা। সন্তানের জন্য বাবাদের মমতা আর লড়াইটা থাকে নিভৃতে। আমি অনেক বাবা দেখেছি যারা মায়ের ভূমিকাও পালন করে।
তবে সন্তানদের বেড়ে ওঠা, তাদের মানুষ করার ব্যাপারে মায়েদের কৃতিত্ব বেশি। মায়েরা সন্তানকে নয় মাস গর্ভে ধারণ করে এবং সন্তান প্রসবের যন্ত্রণা ভোগ করে। মৃত্যু যন্ত্রণার পরই এই যন্ত্রণা। কিন্তু মায়েরা এই কষ্টটা সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে মুহূর্তে ভুলে যায়। তারপর বড় হয়ে সন্তান একসময় দূরে চলে যায়। সন্তান মানে সমতান। এদের মধ্য দিয়েই বাবারা বেঁচে থাকে। সন্তানের জন্য বাবাদের বুকের গভীরে চৈত্রের কুয়োর তলানি জলের মতো কিছু ভালবাসা সবসময় পড়ে থাকে। ওই দুস্তর পথ পার হয়ে সেইটুকু স্পর্শ করবে কে? অভিমানই বাবাদের অস্তিত্ব। তার সঙ্গে চলে অপেক্ষা অপেক্ষা। তার পাশে কেউ আসুক, সবাই আসুক..।