শ্রীতমা বসাক
অমাবস্যা রাত। গভীর রাত। আকাশ জুড়ে গাঢ় অন্ধকার। মাঝে মাঝে জোনাকী আলো দিয়ে আবার কোথায় হারিয়ে যায়। গ্রামের জনপদ শূন্য। দুরে কোথাও শেয়ালের ডাক শোনা যায়। মাঝে মাঝে ঝি-ঝি পোকার ডাক। রনি বাড়ি ফিরছে। কাধে হালকা ব্যাগ। তেমন কিছূই নেই। বেশ কয়েকমাস পর বাড়ি ফিরছে । রনি ঢাকায় চাকরি করে। গ্রামের বাড়িতে দাদা,বৌদি, ছোট বোন ও বিধবা মা থাকে। মায়ের প্রতি রনির ভালবাসা বেশ গভীর। ছোট বেলায় বাবা মারা যাবার পর মা-ই তাকে আদর যত্ন করে মানুষ করেছে । প্রতিমাসেই রনি বাড়ি যায়। এবারই প্রথম ২ মাস পর বাড়ি ফিরছে। নিয়মিত বাস পায়নি তাই একটু বেশি রাতেই বাসে উঠল। সারাদিনের ক্লান্তিতে শরীর ভেঙে আসছে। সিটে বসেই বাড়ির সকলের কথা ভাবতে ভাবতে রনি ঘুমিয়ে পড়ল। বাস ষ্টেশনে আসতেই সুপারভাইজারের ডাকে ঘুম ভাঙে রনির। তাড়া হুড়া করে বাস থেকে নামল।
কোথাও জন-মানুষের চিহ্ন নেই। আশে-পাশে কোন রিকশা বা ভ্যান নেই। রনি কাঁধে ব্যাগ নিয়ে হাটতে শুরু করল। বাস স্টেশন থেকে বাড়ির পথ প্রায় ১ কিলোমিটার। গা ছম ছম করছে। রনিদের বাড়ি যেতেই পথে একটি শ্মশান। শ্মশানের কোল ঘেষেঁই বাড়ির পথ। গাঢ় অন্ধকারে সামনে পেছনে কিছুই দেখা যায় না। হঠাৎ রনির গা ঘেঁষে একটা কুকুর চলে গেল। আবার কিছুক্ষণ পর রনির পেছন পেছন আসতে লাগল। রনি ভয়ে জড়সড় হয়ে হাটছে। একটু এগোতেই নরেন কাকা। পাশের বাড়ির কাকা। কাকা দেখে জিজ্ঞেস করল, কিরে কি খবর? এত রাতে ফিরলি যে? নরেন কাকাকে পেয়ে একটু স্বস্তি পেল রনি। নরেন কাকার সঙ্গে গল্প করতে করতে রনি বাড়ি পেয়ে গেল। নরেন কাকা তার বাড়ির দিকে চলে গেল। বাড়িতে ঢুকইে মাকে জড়িয়ে ধরল। মা ছেলেকে কাছে পেয়ে মহা খুশি। মা বলল এত রাতে কি করে এলি? রনি বলল মা, পথে নরেন কাকার সঙ্গে দেখা। কাকার সঙ্গে গল্প করতে করতেই বাড়ি চলে এলাম।
রনির কথা শুনে মা আঁতকে উঠল। সঙ্গে সঙ্গে রনির দাদা, বৌদি, ছোট বোন ঘিরে ধরল রনিকে। দাদা বলল রনি জানিস তুই কি বললি? বৌদি বলল, ঠাকুরপো নিশ্চয়ই ভুল দেখছে। রনি বলল, ভুল বলব কেন? সত্যিই কাকা গল্প করতে করতে আমাকে এগিয়ে দিয়ে গেল। সত্যিই ওটা নরেন কাকা ছিল। ছোট বোন জড়িয়ে ধরে বলল, নরেন কাকাতো এক মাস হল মারা গেছেন। এই কথা শুনেই রনি অজ্ঞান।