বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৪৪তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে নজরুল ফাউণ্ডেশন কানাডার উদ্যোগে ২৯ আগষ্ট শনিবারে অন-লাইনে একটি আন্তর্জাতিক সভার অনুষ্ঠিত হয।
আন্তর্জাতিক সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির সাবেক প্রকাশনাধ্যক্ষ, বাংলাদেশ জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের সাবেক পরিচালক জনাব ফজলে রাব্বি এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে অংশ গ্রহণ করেন বিদ্রোহী কবি নজরুল ইসলামের নাতনী খিলখিল কাজী, ঢাকা থেকে প্রধান আলোচক ছিলেন জাতি সত্ত্বার কবি খ্যাত কবি আব্দুল হাই শিকদার। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনায় ছিলেন শ্রীমতি রিনাসেনগুপ্তা এবং সৈয়দা মার্জিয়া আপরুজ মৌ।
সভায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে বহু নজরুল অনুরাগী, নজরুল প্রেমিক এবং নজরুল গবেষক অংশ গ্রহণ করেন। নজরুলের সাহিত্য সৃষ্টি নিয়ে আলোচনা, নজরুলের কবিতা বাংলা ও ইংলিশ অনুবাদ আবৃত্তি, নজরুল সঙ্গীত পরিবেশায় তিনঘন্টা ব্যাপী অনুষ্ঠানটি ছিল প্রাণবন্ত।
খিলখিল কাজী তাঁর বক্তব্যে বলেন, দাদু কাজী নজরুল ইসলামের সাহিত্য ভাণ্ডারের প্রকাশ, প্রচার এবং প্রতিষ্ঠা তাঁর জীবনের প্রধান ব্রত। পৃথিবীর যারা যেখানে থেকে নজরুলকে নিয়ে চর্চা, গবেষণা, প্রচার ও প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করছেন তাদের সকলের প্রতি তাঁর সক্রিয় সহায়তা দিয়ে আসছেন এবং এই সহায়তা আজীবন অব্যাহত থাকবে বলে আশ্বাস ব্যক্ত করেন। খিলখিল কাজীকে ‘নজরুল ফাউণ্ডেশন কানাডা’র আজীবন সম্মানিত ডাইরেক্টর পদ প্রদান করার ঘোষণা দেন নজরুল ফাউণ্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি জনাব নুরুল ইসলাম।
কবি আব্দুল হাই শিকদার তাঁর বক্তব্যে একুশ শতকে নজরুলের প্রাসঙ্গিকতার গুরুত্ব তুলে ধরেন এবং বাংলাদেশের বাহিরে বিভিন্ন দেশে যারা বসবাস করছেন তাঁরা বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় বিদ্রোহী কবি নজরুলের সাহিত্যের প্রচার ও প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করার জন্য আহ্বান জানান ।
কলিকাতা থেকে সুহিনি সেনগুপ্তা ইংলিশে অনুদিত বিদ্রোহী কবিতা আবৃত্তি করেন, সৈয়দা মার্জিয়া আপরুজ মৌ বিদ্রোহী কবিতার দার্শনিক মর্মবাণী নিয়ে এক জ্ঞানগর্ভ আলোচনার পর সুমন মালিক বিদ্রোহী কবিতার অংশ বিশেষ আবৃত্তি করেন।
ঢাকা থেকে অংশগ্রহণকারী রন্ধন শিল্পে বিশেষজ্ঞ নয়না আফরোজ যিনি নজরুলের খাদ্যাবাসের ওপর গবেষণা করেছেন, তিনি কবি নজরুল ইসলামের পছন্দের নানা প্রকার সুস্বাদু খাদ্যের একটি থালা নিজ হাতে তৈরি করে সভায় প্রদর্শন করেন, এবং সভা শেষে থালাটি কবি নাতনি খিলখিল কাজীর ঢাকার বাসায় পৌঁছে দেওয়ার আশা ব্যক্ত করেন।
নজরুল রচিত ‘আনন্দময়ীর আগমনে’ কবিতার সংক্ষিপ্ত পটভূমি উল্লেখ করে কবিতাটি আবৃত্তি করেন ঢাকা নটরডেম কলেজের শিক্ষক খ্যাতিমান আবৃত্তি শিল্পী জনাব ফয়সল আজিজ। ‘খেয়া পারের তরণী’ কবিতাটি আবৃত্তি করেন বাংলাদেশের রেডিও টিভির নিয়মিত আবৃত্তি শিল্পী জনাব তুহিন রেজা। ইংল্যান্ড থেকে সভায় অংশ গ্রহণকারী বিশিষ্ট আবৃত্তি শিল্পী আবু সাঈদ আনসারি আবৃত্তি করেন নজরুলের ‘মানুষ’ কবিতা। লন্ডণ থেকে সঙ্গীত পরিবেশন করেন বিশিষ্ট নজরুল সঙ্গীত শিল্পী নাদিয়া নাজিয়া। নতুন প্রজন্মের তরুণরাও সভায় সক্রিয়ভাবে অংশ গ্রহন কেরে আলোচনা, গান ও আবৃত্তি পরিবেশন করেন। জাকিয়া ইসলাম নজরুলের সিরাজগঞ্জে সফর কালে নজরুলের দেয়া অভিভাষন ‘যৌবনের গাস’ নিয়ে আলোচনা করেন। পিয়া রয় ‘মসজিদেরই পাশে আমায় কবর দিও ভাই’ নজরুলের জীবনের শেষ ইচ্ছা সম্বলিত গানটি হৃদয় নিংড়ানো দরদ ভরা সুরে পিবেশন করেন। নজরুলের বিশ্ব ভ্রমান্ডের দর্শন নিয়ে রচিত ‘খেলিছ এ বিশ্ব লয়ে বিরাট শিশু আনমনে’ গানটি পরিবেশন করেন চয়ন সেনগুপ্ত। ‘কাণ্ডারি হুশিয়ার’ কবিতার ইংলিশ অনুবাদ আবৃত্তি করে শোনান আবরার ইবনে হাবিব।
আরো যারা বিভিন্ন দেশ থেকে অংশ গ্রহণ করেন এবং বক্তব্য রাখেন তাঁরা হচ্ছেন- ড.ফজলুল হক্ব তুহীন, ড. হাসনান আহমদ (ঢাকা), মামুনুর রহমান খান (ঢাকা), এমদাদুর রহমান (লন্ডন), শেখ মহিতুর রহমান বাবলু (লন্ডন), আকবর হোসেন (লন্ডন), এনামুল হক্ব চৌধুরী সিএ (ঢাকা), নাহিদ নাজিয়া (লন্ডন), বেগম আফরোজা, ড. ফাত্তাহ, প্রকৌশলী শিরাজ ইকবাল, ড. নাসিমা আখতার, ড. শেখ শিবলী নোমানি, ফয়জুল হক্ব সিসিপি, জহুরুল ইসলাম সিএ, প্রফেসর মোঃ মাসুক, নাজিম শফি খান, জয়নাল চৌধুরী।
সভার সভাপতি জনাব ফজলে রাব্বি সবাইকে ধন্যবাদ জানায়ে সংক্ষিপ্ত সমাপনি বক্তব্য রাখার পর সভাপতির অনুমতিক্রমে সৈয়দা মার্জিয়া আফরুজ মৌ সভার সমাপ্তি ঘোষণা করেন।