ধর্ষণের অব্যাহত ঘটনার প্রেক্ষাপটে শৈশব থেকেই নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরিতে স্কুলের পাঠ্যক্রমে নারী নির্যাতন ও যৌন হয়রানির মতো বিষয়গুলোকে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। আন্তর্জাতিক কন্যা শিশু দিবস উপলক্ষে রোববার আয়োজিত এক ভার্চুয়াল সংলাপে তিনি এ তথ্য জানান। করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে ধর্ষণ ও যৌন হয়রানির ঘটনা ব্যাপক ক্ষোভ-বিক্ষোভের জন্ম দিয়েছে।
ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের শাস্তি আরও কঠোর করার দাবি যেমন উঠেছে, তেমনি সমাজে নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গী পরিবর্তনে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বানও এসেছে বিভিন্ন কর্মসূচি থেকে।
দীপু মনি বলেন, “শুধু কোভিড সংকট নয়, আগামীর সব ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাচ্ছি আমরা।”
মহামারীর মধ্যে বাল্যবিয়ের প্রবণতা বাড়ার বিষয়ে তিনি বলেন, “এখন প্রতিটি ইউনিয়নে জন্ম নিবন্ধন ডিজিটালাইজড হয়ে যাচ্ছে। তাই ভুয়া সনদ দেখিয়ে বয়স বাড়িয়ে বিয়ে দেওয়া যাবে না।”
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক আয়োজিত ‘মেয়েদের স্কুলে ফেরাতেই হবে’ শীর্ষক ডিজিটাল সংলাপ অনুষ্ঠানে জানানো হয়, মহামারীতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় মেয়ে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার হার বাড়ছে, বেড়ে যাচ্ছে বাল্যবিয়ে।
অনুষ্ঠানে সংসদ সদস্য আরমা দত্ত বলেন, “আমাদের বাস্তবতা বুঝে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এটা সত্য যে, এই মহামারীতে আমরা কিছু হারিয়েছি, আরও কিছু হারাব। স্কুল থেকে ঝরে পড়ার হার অবশ্যই বেড়েছে।
“শিক্ষার্থীদের, বিশেষত আমাদের মেয়েদের জন্য প্রযুক্তিগত শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে, যাতে প্রয়োজনের সময় তারা তাদের জীবিকা নির্বাহ করতে পারে।”
করোনাভাইরাসের কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও ডিজিটাল মাধ্যমে ক্লাস করানোর ক্ষেত্রে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছাতে পারার দাবি করেন দীপু মনি।
“টেলিভিশনে ক্লাস নেওয়ার মানও বেড়েছে। শুধু সরকার নয়, বেসকারি পর্যায়েও অনেক প্রতিষ্ঠান এভাবে ক্লাস নিচ্ছে। তাই শিক্ষার্থীদের যে এই পরিস্থিতিতে স্কুলে যেতেই হবে- এমনটি ভাবা যাবে না।”
বিভিন্ন দেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার পর তা আবার বন্ধ হয়ে গেছে উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ক্ষেত্রে বুঝেশুনে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার কারণে শিক্ষার্থীদের ক্ষতির পাশাপাশি শিক্ষকরাও যে বিপদে আছেন, তা সংলাপে তুলে ধরেন গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী।
“এই মহামারিটা আমাদের সামনে একটা ম্যাগ্নিফাইং গ্লাসের মতো। আমাদের ভুল-ভ্রান্তি ও করণীয় সম্পর্কে নতুন করে শিখতে পারছি। সবাইকে স্কুলে ফেরানোর আগে তথ্য-উপাত্ত ও বাস্তবতা যাচাই করে দেখতে হবে।”
অন্যান্য খাতের মত শিক্ষাখাতেও প্রণোদনার ব্যবস্থা করা, শিক্ষকদের বেতন-ভাতা, শিক্ষার্থীদের টিফিনের ব্যবস্থা রাখতে শিক্ষমন্ত্রীর প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সাদেকা হালিম বলেন, “দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে গেছে প্রায় ৪৩ শতাংশ পরিবার। এই পরিবারগুলোতে স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচুর শিক্ষার্থী রয়েছে। তাদের জন্য কী করা যেতে পারে, সে সম্পর্কে আমাদের চিন্তাভাবনা করা উচিত।“ অস্ট্রেলিয়ান হাই কমিশনের ফার্স্ট সেক্রেটারি সাইমন বাকলি বলেন, “যখন বিদ্যালয়গুলো আবার চালু হবে, তখন শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জোর প্রচেষ্টা থাকতে হবে আগের ক্ষতি কীভাবে পুষিয়ে নেওয়া যায়।”
ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ বলেন, “টানা স্কুল বন্ধ থাকায় শিশুরা যা শিখেছে, তা-ও ভুলতে বসেছে। তবে স্কুলগুলো হুট করে না খুলে, পর্যায়ক্রমে মনিটরিং করে খুলতে হবে। যেসব জেলায় সংক্রমণ কম, সেসব স্থানে আগে খোলা যেতে পারে।” ব্র্যাকের জেন্ডার জাস্টিস অ্যান্ড ডাইভারসিটি কর্মসূচির পরিচালক নবনীতা চৌধুরীর সঞ্চালনায় সংলাপে আরও অংশ নেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার আমেনা বেগম, ঢাকাস্থ ব্রিটিশ হাইকমিশনের সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অ্যাডভাইজার তাহেরা জাবীন।