হুমায়ূন কবীর ঢালী
ভেবেছিলাম, করোনা অবসরে পাঠক স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় বেশি বেশি বই পড়বে। কিন্তু আমার ভাবনা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। মানুষ এই সময় বেশি বেশি খাওয়া-দাওয়া, ফেসবুক ও টিভি সিরিয়াল নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও পড়তে আগ্রহী নয় মোটেও। আসলে, বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ পড়তে বিরক্তবোধ করে। এই অংশটি উপরে উল্লেখিত বিষয়গুলো ছাড়াও পরচর্চা-গিবত, আড্ডায় – চাড্ডায়, রাজনীতির প্যাঁচাল নিয়ে ব্যস্ত থাকতে পছন্দ করে।শুনে অনেকেই অবাক হবেন, গত শতাব্দীর অাশি ও নব্বই দশকে প্রকাশকগণ গল্প -উপন্যাস প্রথম প্রিন্ট করতেন ২২০০ থেকে ২৫০০ কপি। প্রবন্ধ -গবেষণা ১০০০-১২০০ কপি, ছড়া-কবিতা ১০০০-১২০০কপি।
এই শতাব্দীর শূন্য দশকে প্রিন্ট নেমে আসে অর্ধেকে। গত পাঁচ-সাত বছর থেকে ২৫০ থেকে ৫০০, কখনো কখনো ১০০০ কপি।তবে জনপ্রিয় লেখকদের ক্ষেত্রে এই হিসাবটা ভিন্ন। তাঁদের ক্ষেত্রে প্রথম প্রিন্ট বেশি হয়ে থাকে।এখন কথা হচ্ছে, কেন এই দৈন্যদশা! দেশে শিক্ষার হার গত পঁচিশ বছরে বাড়লেও সৃজনশীল ও মননশীল বইয়ের পাঠক বাড়েনি মোটেও।এর কারণ কি? সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও টিভি আসক্তি কি পাঠক বৃদ্ধির অন্তরায়?ব্যক্তিগতভাবে আমি তা পুরোপুরি মনে করি না। পাঠকের হার কমে যাওয়ার পেছনে অসংখ্য কারণ নিহিত। অসংখ্য কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম কয়েকটি মনে করি আমাদের দুর্বল শিক্ষাব্যবস্থা, অভিভাবকদের অগ্যতা, খেলাধুলার জন্য পর্যাপ্ত মাঠের অভাব, ইন্টারনেট, ফেসবুক, টিভিসিরিয়াল ও শিশুদের ভার্চুয়াল গেমে আসক্তি।
এতে করে পরিবারে, সমাজে ও রাষ্ট্রে কালো ছায়া দিনকেদিন ঘনিভূত হচ্ছে। সর্বত্র হানাহানি, মারামারি, খুন, ধর্ষণ ও নানারকম সামাজিক বৈষম্যের সৃষ্টি হচ্ছে।একটি কথা সবসময় সবাইকে মনে রাখতে হবে, পড়ার বিকল্প নেই। বই মানুষকে সবরকম কুপ্রভাব থেকে দূরে রাখে।পরিবারও সমাজের পাশাপাশি রাষ্ট্রের কর্তাদেরও মনে রাখতে হবে, শুধু আইন করে, পুলিশ দিয়ে পিটিয়ে, ক্রসফায়ার দিয়ে সমাজ ও রাষ্ট্রকে ঠিক রাখা সম্ভব নয়। রাষ্ট্রের নাগরিকদের শিক্ষিত-সৃজনশীল সচেতন নাগরিক হিসেবে তৈরি করার জন্য আন্তরিকভাবে কাজ করতে হবে। নানারকম কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে। প্রতিটা নাগরিকের মনে বইয়ের প্রতি প্রেম জাগিয়ে তুলতে হবে। নৈতিকতা-আদবকায়দা শিক্ষা দিতে হবে।তাহলেই কেবল সমাজে বিদ্যমান নানা অসঙ্গতি- অনাচার- ব্যভিচার, খুনখারাবি, মাদকাসক্তি, ধর্ষণ, হানাহানি, মানুষে মানুষে গুড রিলেশন, ছোটবড় মান্যতা বাড়বে। পরিবার- সমাজ ও রাষ্ট্র সকলের বাসযোগ্য হিসেবে গড়ে উঠবে।