বরাবরে-“প্রধানমন্ত্রী প্রতিদিন”। পত্র নং-১২, Daily #NoteToOurPrimeMinister, প্রিয় পাঠক/পাঠিকা-যৌক্তিক, গঠনমুলক, তথ্যসম্বলিত ও শালীন মন্তব্য/পরামর্শসমুহ আপনাদের নাম-পরিচয় সহ ছাপা হবে আসন্ন মুল বইয়ে। সুতরাং শুধুমাত্র বিষয় সংশ্লিষ্ট মার্জিত মন্তব্যই কাম্য।—প্রিয় প্রধানমন্ত্রী-প্রজাতন্ত্রের সর্বাধিক সাধারণ কিন্তু অত্যন্ত গর্বিত এই নাগরিক রাশেদ কাঞ্চন বাংলাদেশ-এর সালাম নিন। আপনার নিরাপত্তা ও সুস্বাস্থ্য সর্বদাই কাম্য। আমি মনেপ্রানে বিশ্বাস রাখি জাতি, জাতীয় সুরক্ষা, সার্বভৌমত্ব এবং দেশের অগ্রগতির বিষয়ে আপনি কখনোই কোনও আপস করবেন না।
প্রিয় প্রধানমন্ত্রী
গ্রাহকসেবার মানোন্নয়ন ও বিদ্যুৎ খাতের আধুনিকায়নের তাগিদে দেশের সব গ্রাহককে বৈদ্যুতিক প্রিপেইড মিটারের আওতায় নিয়ে আসার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এর ভিত্তিতে বিতরণ কোম্পানিগুলো কাজও শুরু করে দিয়েছিল। পরিকল্পনা অনুযায়ী, সবার আগে রাজধানী ঢাকার গ্রাহকদের এ সেবা পাওয়ার কথা থাকলেও অগ্রাধিকার ও গ্রাহক বিবেচনায় এ কার্যক্রমে পিছিয়ে পড়েছে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ডিপিডিসি)। এ কার্যক্রম শুরুর সাত বছর পেরিয়ে গেলেও নিজস্ব মোট গ্রাহকের ৩০ শতাংশকেও প্রিপেইড সেবার আওতায় আনতে পারেনি কোম্পানিটি। বৈদ্যুতিক মিটার স্থাপনে ডিপিডিসির এ ধীরগতি সংশ্লিষ্টদের পাশাপাশি ক্ষুব্ধ ও অসন্তুষ্ট করে তুলেছে গ্রাহকদেরও।
প্রিয় প্রধানমন্ত্রী
ডিপিডিসি বলছে, ঢাকায় বিদ্যুতের অপচয় হ্রাস ও গ্রাহকদের সাশ্রয় বাড়াতে গৃহীত এ কার্যক্রমের আওতায় সন্তোষজনক মাত্রায় বিদ্যুতের প্রিপেইড মিটার বসাতে পারেনি ডিপিডিসি। অথচ বড় কোম্পানি হিসেবে এ প্রতিষ্ঠানটিরই সবার আগে গ্রাহকদের জন্য ডিজিটাল সেবা নিশ্চিত করার কথা ছিল।
চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত পাওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ঢাকায় ডিপিডিসির মোট গ্রাহক ১৩ লাখ ৫৫ হাজার ৭৯ জন। এর মধ্যে আবাসিক গ্রাহক ১২ লাখ ২৬ হাজার বা মোট গ্রাহকের প্রায় ৯০ শতাংশ। বাকি গ্রাহকের মধ্যে ৯৬ হাজার বাণিজ্যিক ও ২৪ হাজার শিল্প খাতের গ্রাহক। অন্যদিকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত পাওয়া তথ্য বলছে, এর মধ্যে ৪ লাখ ৪৭ হাজার ৪৪৭ জন গ্রাহককে প্রিপেইড সেবার আওতায় আনতে পেরেছে ডিপিডিসি। এর মধ্যে ‘অন ফেজ’ প্রিপেইড মিটার বসানো হয়েছে প্রায় ৪ লাখ ১০ হাজার ও ‘টু ফেজ’ মিটার বসানো হয়েছে সাড়ে ৩৬ হাজার। এখনো ৯ লাখ ৮ হাজার গ্রাহক প্রিপেইড মিটার সুবিধার বাইরে রয়ে গিয়েছেন।
প্রিয় প্রধানমন্ত্রী
প্রিপেইড মিটার স্থাপনে ধীরগতির বিষয়টি স্বীকার করে ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী বিকাশ দেওয়ান বলেন, আমাদের কিছুটা দেরি হয়ে গেছে। তবে এখন আবার কাজে গতি বেড়েছে। নতুন করে সাড়ে আট লাখ প্রিপেইড মিটার বসানোর প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এরই মধ্যে এ প্রকল্পের জন্য ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়েছে।প্রিপেইড মিটার স্থাপনে ডিপিডিসির ধীরগতির কারণ জানতে চাইলে সংস্থাটির শীর্ষ এ কর্মকর্তা জানান, শুরুতেই তিন বছর মেয়াদি একটি প্রকল্প ছিল আমাদের। কিন্তু টেকনিক্যালসহ বেশকিছু সংকটের কারণে এটি দেরি হয়ে গেছে। এখন এ প্রকল্প আবার বাড়াতে হবে। শুরুতে ২০২০ সালের মধ্যে এ কার্যক্রম শেষ করতে পারব বলে আমরা আশা করেছিলাম। কিন্তু এখন ২০২২ সাল পর্যন্ত নিয়ে যেতে হবে।
প্রিয় প্রধানমন্ত্রী
সংস্থাটির গ্রাহকরা বলছেন, বিদ্যুতের প্রিপেইড মিটার সুবিধার আওতায় ঢাকার বাসিন্দাদের নিয়ে আসার কথা ছিল সবার আগে। কিন্তু ডিপিডিসি এখনো অর্ধেক গ্রাহককেই এ সুবিধার আওতায় নিয়ে আসতে পারেনি। ফলে গ্রাহকদের বিদ্যুতের অতিরিক্ত বিল ও ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে এখনো।রাজধানীর বংশাল এলাকার বাসিন্দা মির্জা রায়হান (ছদ্মনাম) বলেন, অনেক দিন আগে থেকে শুনছি প্রিপেইড মিটার বসাবে কোম্পানি। আজ অবধি তা শুধু শুনেই আসছি। তিন-চার বছর পেরিয়ে গেল, এখনো মিটার পেলাম না। মিটার থাকলে ইচ্ছা অনুযায়ী রিচার্জ করে বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে পারতাম। কিন্তু এখনো সেই পুরনো নিয়ম অনুযায়ী বিদ্যুতের বিল দিয়ে যাচ্ছি।একই অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন রাজধানীর আরো কয়েকটি এলাকার গ্রাহকরাও।
প্রিয় প্রধানমন্ত্রী
২০১৩ সালে প্রিপেইড মিটার বসানোর কার্যক্রম শুরু করে ডিপিডিসি। কথা ছিল ২০১৯ সালের মধ্যেই সংস্থাটির সব গ্রাহককে প্রিপেইড মিটারের আওতায় নিয়ে আসা হবে। কিন্তু পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৩-১৪ অর্থবছরের শুরুতে ৪ হাজার ৯৯৫টি ‘অন ফেজ’ এবং একটি ‘থ্রি ফেজ’ মিটার বসায় সংস্থাটি। এরপর ২০১৪-১৫ অর্থবছরে আরো ৯ হাজার ৮৩৯টি প্রিপেইড মিটার বসানো হয়। ২০১৫-১৬ ও ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বসানো হয় যথাক্রমে ২ হাজার ৪৪৭ ও ২৭ হাজার ১৬০টি প্রিপেইড মিটার। ২০১৭ সালে সরকারের পক্ষ থেকে প্রিপেইড মিটার বসানোর কাজে জোর দেয়া হলে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ২ লাখ ২৩ হাজার মিটার বসায় সংস্থাটি। এরপর ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এ সংখ্যা নেমে আসে ১ লাখ ২১ হাজার ১৩৯-এ। ২০১৯-২০ অর্থবছরে মাত্র ৭৭ হাজার ৮৬৩টি মিটার স্থাপন করা হয়। এর মধ্যে ‘অন ফেজ’ ৬৭ হাজার ৪০০ এবং ‘থ্রি ফেজ’ প্রিপেইড মিটার বসানো হয় ১০ হাজার ৪৫৪টি।
ডিপিডিসি সূত্রে জানা গিয়েছে, নতুন করে সাড়ে আট লাখ প্রিপেইড মিটারের প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। আধুনিকায়ন ও নতুন প্রযুক্তির কথা মাথায় রেখে এটি এখনো ডিজাইন পর্যায়েই রয়েছে। তবে ঠিক কবে নাগাদ এ প্রকল্প আলোর মুখ দেখবে, তা বলা যাবে না।
প্রিয় প্রধানমন্ত্রী
অন্যদিকে ঢাকায় বিদ্যুতের আরেক কোম্পানি ঢাকা ইলেকট্রিক্যাল সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেডের (ডেসকো) গ্রাহক সংখ্যা ১০ লাখ। শিল্প এলাকা বিবেচনায় সংস্থাটি তিন লাখের বেশি প্রিপেইড মিটার স্থাপন করেছে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সংস্থাটির স্থাপনকৃত প্রিপেইড মিটারের সংখ্যা ২ লাখ ৯৩ হাজার ৮৩৮। সংস্থাটি বর্তমানে রাজধানীর উত্তরা, মহাখালী, মিরপুর, খিলক্ষেতসহ বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে। বিতরণ কোম্পানিটি এখন পর্যন্ত মোট গ্রাহকের অন্তত ৩৫ শতাংশকে প্রিপেইড মিটারের আওতায় নিয়ে আসতে পেরেছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন ছয়টি বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি এ পর্যন্ত ৩১ লাখ ৫ হাজার ৪১০টি প্রিপেইড মিটার বসিয়েছে। এর মধ্যে ডিপিডিসি ও ডেসকো ছাড়াও বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) ১১ লাখ ৪৫ হাজারটি, বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (বিআরইবি) ১০ লাখ ১০ হাজার ৫১৮, ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ওজোপাডিকো) ১ লাখ ৯৫ হাজার ৫৯১ ও নর্দার্ন ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড (নেসকো) ১৮ হাজার ৮৯৪টি প্রিপেইড মিটার বসিয়েছে।
প্রিয় প্রধানমন্ত্রী
আজ এ পর্যন্তই। আবারও আপনার সুস্থতা কামনা করছি। মহান সৃষ্টিকর্তা সর্বদাই আপনার সহায় হউন।
ইতি
রাশেদ কাঞ্চন বাংলাদেশ (প্রজাতন্ত্রের সর্বাধিক সাধারণ কিন্তু অত্যন্ত গর্বিত একজন নাগরিক)।