রেজা ঘটক
লেখক: একজন কথাসাহিত্যিক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা
ঠিক এক বছর আগে ২০১৯ সালের ১০ ডিসেম্বর আমি ‘হরিবোল’ সিনেমা বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডে জমা দিয়েছিলাম। আজ এক বছর পূর্ণ হলো অথচ সেন্সর বোর্ডের এখনো ঘুম ভাঙেনি!
চলচ্চিত্র সেন্সর আইনের কোথাও সিনেমার সাথে এফডিসি’র এনওসি জমা দেওয়ার কোনো আইন নাই। নাই মানে একদম নাই। কিন্তু ‘সেন্সর বোর্ড, এফডিসি, প্রযোজক-পরিবেশক সমিতি ও পরিচালক সমিতি’ এই চার সিন্ডিকেট মিলে একটা অলিখিত আইন বানিয়েছে যে সিনেমার সাথে এফডিসি’র এনওসি লাগবে। এই সিন্ডিকেটের ‘এনওসি লাগবে’ এমন দাবির পক্ষে কোনো সরকারি গেজেট নাই কিন্তু এই চক্র এই অযুহাত দিয়ে আমার সিনেমা আটকে রেখেছে!
সবচেয়ে দুঃখের বিষয় বাংলাদেশের গণমাধ্যম এই সিন্ডিকেটের এই ‘এনওসি লাগবে’ বিষয়ে কখনোই কোনো অনুসন্ধানী রিপোর্ট করে না। কারণ সিনে জার্নালিস্টদের এফডিসি’র বাৎসরিক পিকনিক তারা মিস করতে চায় না।
একজন স্বাধীন চলচ্চিত্র নির্মাতার এই ‘কথিত এনওসি’র জন্য প্রায় তিন লাখ টাকা খরচ কেন করতে হবে’ এটা নিয়েও কেউ প্রশ্ন তোলে না! প্রশ্ন হলো- তাহলে কী বাংলাদেশে স্বাধীন চলচ্চিত্র নির্মাতা টার্মটি একটি লোক দেখানো বিষয়?
এর মধ্যে যতবার তথ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব পরিবর্তন হয়েছে ততবার এই ইস্যুকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে কিন্তু আমি আমার ‘হরিবোল’ চলচ্চিত্রের সেন্সর পাই নাই।
এখন আবার তথ্য মন্ত্রণালয়ে নতুন সচিব এসেছেন এবং আমাকে নতুন সচিব বরাবর চিঠি লেখার অনুরোধ করা হয়েছে। প্রশ্ন হলো- আমার আগের চিঠিগুলো তাহলে মন্ত্রণালয়ে তথ্য সচিবের কাছে কী বার্তা পৌঁছালো?
আপনারা জানেন তথ্য সচিব যিনি থাকেন তিনিই সেন্সর বোর্ডের চেয়ারম্যান। বারবার সচিব বদল হবে আর বারবার নতুন সচিবকে চিঠি লিখতে হবে কেন? বাংলাদেশের সচিবালয়ে তাহলে একজন সাধারণ নাগরিকের পক্ষে কত বার চিঠি লেখা সম্ভব?
আমি সেন্সর বোর্ডকে আবারো স্মরণ করিয়ে দিতে চাই- তথ্য সচিব বরাবর আর কোনো চিঠি আমি লিখব না। প্রয়োজনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বরাবর চিঠি লিখব এবং আমার সিনেমার কপি পাঠাব। এবং জানতে চাইব কোন আইনের বলে সেন্সর বোর্ড আমার ছবি আটকে রেখেছে?
বাংলাদেশে সিনেমা বানানোর চেয়ে সিনেমার সেন্সর পেতে এই ‘চার সিন্ডিকেট যে কত বড় বাধা’ তা নিয়ে সবাই প্রশ্ন তুলুন। মনে রাখবেন আপনি যখন সিনেমা বানিয়ে সেন্সর বোর্ডে যাবেন, এই সিন্ডিকেট কিন্তু আপনাকেও আটকাবে!
আবারো স্মরণ করিয়ে দিতে চাই- এফডিসি’র সাথে ‘হরিবোল’ সিনেমার কোনোভাবেই কোনো যোগসূত্র নাই। অতএব এফডিসি থেকে এনওসি নেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। আর সেন্সর আইনেও এটি নাই। এটাকে এই চার সিন্ডিকেট একটি প্রথা হিসেবে দাঁড় করিয়েছে। যা বাস্তবতা বিবর্জিত!
এটা নিয়ে আপনিও কথা বলুন। আপনি কী বাংলাদেশে সিনেমা বানাতে চান? তাহলে এই সিন্ডিকেট ভাঙুন। এই সিন্ডিকেট নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলুন। নইলে বাংলাদেশের সিনেমা সেই তিমিরেই রয়ে যাবে!