মহামারি করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন আনতে সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেছেন, খুব দ্রুত করোনার ভ্যাকসিন বাংলাদেশ পৌঁছাবে।
বুধবার (১৬ ডিসেম্বর) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় এ কথা জানান তিনি। সভায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী। এই সময় আওয়ামী লীগের শীর্ষনেতারা আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে উপস্থিত ছিলেন। খবর বাসস।
সরাসরি বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে না পেরে বিষয়টিকে ‘জেলে বন্দি’র সঙ্গে তুলনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘খুব খারাপ লাগছে। সবাই ওখানে বসে আছেন আর আমি এখানে জেলখানার মতো বন্দি শিবিরে বসে আছি। কবে করোনার এই বন্দিত্ব থেকে মুক্তি পাব। শুধু বাংলাদেশ না পুরো বিশ্বেই একই অবস্থা।’
“ভ্যাকসিন আসার ব্যবস্থা আমরা করে দিয়েছি। ইতিমধ্যে আমাদের চুক্তিও হয়ে গেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ইতিমধ্যে অনুমোদনও দিয়ে দিয়েছে। আমরা আশা করি তাড়াতাড়িই আমরা এটা পেয়ে যাব। তারপরও সব থেকে সুরক্ষা হচ্ছে সবারই মাস্ক পড়ে থাকা, হাত পরিস্কার রাখা এবং দূরত্ব বজায় রাখা।”
এ সময় দেশের মানুষকে স্বাস্থ্য সুরক্ষা মেনে চলার আহ্বান জানান তিনি।
সম্প্রতি বঙ্গবন্ধু ভাস্কর্য নিয়ে বিরোধিতার প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নিয়ে কথা ওঠার চেষ্টা হয়েছে। বাংলাদেশ অসাম্প্রদায়িক চেতনার দেশ। বাংলাদেশে সব ধর্মের মানুষ সমান সুযোগ নিয়ে চলবে।’
“আমরা মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ট আছি বলে অন্য ধর্মাবলম্বীদের অবহেলার চোখে দেখব তা নয়। মনে রাখতে হবে, সবাই এক হয়ে মুক্তিযুদ্ধে একই সঙ্গে রক্ত ঢেলে এদেশ স্বাধীন করেছে। কাজেই এদেশের মাটিতে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই বাস করবে। যার যার ধর্ম পালনের স্বাধীনতা সবারই থাকবে। সেই চেতনায় বিশ্বাস করি এবং ইসলাম আমাদের সেই শিক্ষাই দিয়েছে।”
তিনি বলেন, ‘সবাইকে যেকোনো পরিস্থিতি সহনশীলতার সঙ্গেই মোকাবিলা করতে হয়। কে কি বললো সেটি শোনার থেকে আমরা দেশের জন্য কতটুকু করতে পারলাম সেটিই আমাদের চিন্তায় থাকবে। তাহলেই আমরা সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারব, সঠিক কাজ করতে পারব।’
বক্তব্যের শুরুতে দেশবাসীকে বিজয় ও জাতীয় দিবসের শুভেচ্ছা জানান শেখ হাসিনা। তিনি স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চার নেতা, ৩০ লক্ষ শহীদ, ২ লক্ষ সম্ভ্রান্ত হারানো মা-বোনের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।
এ সময় একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধে যারা সমর্থন দিয়েছেন, পাশে ছিলেন তাদের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতিকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্য থেকে মুক্ত করতে, তাদের একটি সুন্দর জীবন দিয়ে, অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশকে সাবলম্বী করার লক্ষ্য নিয়ে দেশ স্বাধীন করেছিলেন। যাতে বিশ্বের বুকে মাথা উচু করে বাঙালি জাতি চলতে পারে।
বঙ্গবন্ধু মাত্র সাড়ে ৩ বছরে একটি স্বাধীন-স্বার্বভৌম রাষ্ট্র গড়ে তোলার ক্ষেত্রে ইর্ষণীয় অগ্রগতি করেছেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা জানান, তিনি ৫ বছর মেয়াদি কর্মসূচি হাতে নিয়ে সবুজ বিপ্লবের ডাক দিয়েছিলেন। তিনি জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছিলেন অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে। যদি ৫ বছর তিনি সময় পেতেন বিশ্বে বাংলাদেশ সারা বিশ্বে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করতে পারতো।
“আমাদের দুর্ভাগ্য স্বাধীনতা বিরোধিতাকারীরা এবং এদেশের দালালরা কোষামোদী চাটুকারী দল, যারা স্বাধীনতা চায়নি, পরাধীনতায় যারা থাকতে চেয়েছিল; তারা বুঝতে পেরেছিল যে জাতির পিতার এই কর্মসূচি যদি সফল হয় তাহলে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা যেভাবে হবে আর কোনোদিন দাবিয়ে রাখতে পারবে না। সে কারণেই ১৫ আগস্টে আমাদের কালো দিন। জাতির পিতাসহ তার পরিবারকে হত্যা করলো।”
“সেখানেই তারা ক্ষান্ত হয়নি। পরবর্তীতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করে তাদের রাজনীতি করার সুযোগ দেওয়া হলো। তাদের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করা হলো। সেখান থেকেই এদের লক্ষ্যটা বোঝা গিয়েছিলো”, বলেন তিনি।
বর্তমানে ৯৯ ভাগ মানুষ বিদ্যুৎ পাচ্ছে জানিয়ে তিনি শতভাগ মানুষ যাতে এই সুবিধায় আসে তা শিগগিরই পূরণ হবে বলে জানান। একইসঙ্গে শতভাগ মানুষ যাতে ঘর পায় তার ব্যবস্থা করা হবে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।
প্রত্যেকটি মানুষের কি সমস্যা আছে সেদিকে বিশেষ খেলায় রেখে সরকার পদক্ষেপ গ্রহণ করে যাচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই মুহূর্তে মানুষের জীবন-জীবিকা সচল রাখা একান্ত দরকার। কোনো মতেই যাতে মানুষ কষ্ট না পায় সেদিয়ে দেখতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাসের মধ্যেও অর্থনৈতিক গতি ঠিক রাখতে পেরেছি। ২০৪১ সালে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে এগিয়ে নিয়ে যাব।’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে জাতিসংঘ আন্তর্জাতিক পুরস্কার প্রবর্তনের ঘোষণার বিষয়টিকে অন্য অর্জন হিসেবে অভিহিত করেন তিনি।
এ সময় শুধু আওয়ামী লীগসহ যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগ, কৃষক লীগ, শ্রমিক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগসহ প্রতিটি সংগঠন মানুষের পাশে দাঁড়ানোর নেতাকর্মীদের ধন্যবাদ জানিয়ে তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান।
আলোচনা সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা বেগম মতিয়া চৌধুরী, আব্দুর রাজ্জাক, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, হাছান মাহমুদ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, মির্জা আজম; ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ বজলুর রহমান ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ সভাপতি আবু আহাম্মদ মন্নাফি। সঞ্চালনা করেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ।