সেজান মাহমুদ
লেখক পরিচিতি: কথাশিল্পী, গীতিকার, চলচ্চিত্রকার, পেশায় চিকিৎসা বিজ্ঞানী। ইউনিভার্সিটি অব সেন্টার ফ্লোরিডা কলেজ অব মেডিসিনে সহকারী ডিন ও প্রফেসর হিসাবে কর্মরত।
গত তিনদিন টানা তিনটা ক্লাস ছিল। এ বছরের শেষ ক্লাস। তৃতীয়বর্ষ এমডি ক্লাসের ছাত্রছাত্রদের নিয়ে লেকচার, ক্লিনিক্যাল কেস সাইমুলেশন, যার অর্থ হলো নানান অভিনেতা অভিনেত্রী দিয়ে রোগী বানিয়ে তাঁদের পরিপুর্ণ ইতিহাস নেয়া, চিকিৎসা দেয়ার সঙ্গে কীভাবে সামাজিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকে রোগীরা সর্বোত্তম সেবা পেতে পারে তার নিশ্চয়তা দেয়ার শিক্ষা দেয়া। এই ধরেনের ক্লাসগুলো সকাল ৮ টা থেকে একটা বা একটা থেকে পাঁচ পর্যন্ত লম্বা এবং টিম-টিচিং করা হয়।
আমি জনস্বাস্থ্য, সামাজিক মেডিসিন বা সোশ্যাল মেডিসিন, বিহেভিওরাল মেডিসিন, কালচার এন্ড হেলথ এগুলোর ডিরেক্টর এই ক্লাসে। ক্লাসে শিক্ষকদের মধ্যে আছেন ফ্যামিলি ফিজিশিয়ান, ইমারজেন্সি মেডিসিন, অর্থপেডিক সার্জন ও সেইফটি বিশেষজ্ঞ, মেডিক্যাল এথিক্স, ইনফরমেটিক্স বিশেষজ্ঞ।
আমার বিষয়গুলোর নানান দিক স্বাস্থ্য-ব্যবস্থায় বৈষম্য কে তুলে আনে। আমি কেসগুলোর লেখকদের একজন (অনেকটা সাহিত্যের চরিত্র ও গল্প তৈরি করার মতো)। আমিও পত্রপত্রিকা থেকে নানান বৈষম্যের সত্য ঘটনা নিয়ে কেস তৈরি করি। যেমন একটি কেস হলো, ফ্লোরিডার আমাদের আগের শহরের কাছে একটি ছোট শহরে (নাম ব্লাউন্সটাউন) একজন কৃষ্ণাঙ্গ মহিলা বুকে ব্যাথা ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালের ইমারেজন্সিতে আসেন। ডাক্তার- নার্স তাঁর পরীক্ষা নিরীক্ষার পরে বলেন বাসায় চলে যেতে (কারণ, এই মহিলা নানান রোগের রোগী এবং প্রায়ই হাসপাতালে আসেন)। মহিলা যেতে অস্বীকৃতি জানান। তখন হাসপাতাল কতৃপক্ষ পুলিশ ডাকেন। পুলিশ যথারীতি কৃষ্ণাঙ্গ মহিলা দেখে হাতকরা বেঁধে হাসপাতাল থেকে সরিয়ে নিয়ে পার্কিং লটে পুলিশ গাড়ির পাশে বসিয়ে রাখেন যদিও রোগী বলছিলেন ‘আই ক্যান্ট ইভেন ব্রিথ’। পনের মিনিটের মধ্যে রোগী মারা যান। তারপর মামলা এবং পুলিশ বরখাস্ত, ডাক্তারের শাস্তি, হাসপাতালের জরিমানা সব হলো কিন্তু রোগী তো হারিয়ে গেলেন।
এই কেসটায় আমি আমেরিকার রেসিজম ও স্বাস্থ্য-বৈষম্য কে তুলে আনার চেষ্টা করি এবং ব্যাপক বিতর্ক হয় ক্লাসে, কারণ, ক্লাসেও প্রচুর পরিমাণ ট্র্যাম্প ভোটার থাকে!!
তারপর এই স্লাইডটা দেখাই। লক্ষ করুন একেকটা বুদবুদ নির্দেশ করে কতো বেশি কোভিড রোগ হয়েছে। এটা আমেরিকার নানান পেশাজীবীদের নিয়ে তৈরি। লক্ষ্য করবেন যতো বড় বুদবুদ অর্থই এঁদের মধ্যে কোভিড সবচেয়ে বেশি। এবার যদি সেই পেশার লোকদের আয়ের সঙ্গে সম্পর্ক দেখি তাহলে দেখবেন বছরের ৪৮ হাজার ডলারের নিচের আয়ের লোকদের মধ্যেই সবচেয়ে বেশি কোভিড যা লাল ডট লাইন দিয়ে দেখানো। এই বৈষম্য সারা পৃথিবীতেই এক কিন্তু কোন দেশ এটা দেখায় আর কোন দেশ দেখায় না। তবে ব্যতিক্রম অবশ্যই আছে। তারপরও শহরের ধনী ও গরীবের বৈষম্য বিশাল। এই বৈষম্য কোভীড ভ্যাক্সিনের ক্ষেত্রেও দেখা যাবে।
আমেরিকাতেও ডাক্তারদের মধ্যে শুধু টাকার পিছনে ছুটতে দেখা যায় বেশিরভাগ ডাক্তারদের মধ্যে কিন্তু এই বৈষম্য দূর করার কাজটি করতে দেখা যায় না। আমাদের শিক্ষা ভবিষ্যৎ ডাক্তারেরা যেন এরকম না হয়!
ডিসেম্বর ১৯,২০২০
একটি মিউজিক ভিডিও বানানোর ফাঁকে ফাঁকে বিরতিতে লেখা