২০ মে, ২০২০ এ আম্পান নামের যে ঘুর্ণিঝড়টি পশ্চিম বঙ্গকে তছনছ করে দেয় তার খবর দেখছিলো অনন্যা টিভিতে। পশ্চিম বঙ্গের মুখ্য মন্ত্রি সংবাদ সম্মেলনে উৎকন্ঠিত হয়ে বলছিলেন – “সর্বনাশ হয়ে গেলো। দুটো জেলা ধ্বংস হয়ে গেলো। মৃত্যুর হার বেড়েই চলেছে”। আর, তার সাথে আসছে ঝড়ের লাইভ টেলিকাস্ট।
টিভির সামনে বসে উচ্চকিত হয়ে ফোন হাতে নিয়ে অনন্যা নীলকে খোঁজে। কিন্তু, তখন সারা কোলকাতা অন্ধকারে ডুবে আছে। ইলেক্ট্রিসিটি ফেইল। ইন্টারনেট বন্ধ। রাস্তা ভরা পানি। এক দুঃস্বপ্নের মত কোলকাতার জীবন!
নীলের ইনবক্স যেন হাহাকার করছে। বিন্দুর মত সবুজ আলোটি জ্বলছে না তার ম্যাসেঞ্জারের। অনন্যা কি করবে ভেবে পায় না। অবশ দেহ। হতাশার দৃষ্টি আর অবান্তর এক চেতনা নিয়ে টিভির পর্দায় নীলকে খুঁজে বেড়ায় সে সেই অন্ধকারে!
অথচ, শেষ দিকে অনন্যা নীলকে ক্ষমা করেছিলো। নীল যখন বললো, তোমাকে কাছে পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা যে নেই তা আজকে নয় অনেক আগেই জানতাম। আমার ভালোবাসায় হয়তো শারিরীক চাহিদা আছে। তাতে তুমি নিজেকে ছোট ভেবেছো, ভেবেছো আমি ওইটুকুই তোমাকে চাই।
কিন্তু, তা সত্য নয়, মেমসাহেব। আমি তো পুরুষ, তুমি নারী। আগুন আর ঘি। এতো নিরন্তর। তা ছাড়া কেন চাইবো না তোমাকে, মেমসাহেব? “Japanese wife” মুভির নৌকোর দৃশ্যটা তো তুমি দেখেছো! নায়ক কি করে নৌকোয় শুয়ে নিজেকে শীতল করার চেষ্টা করেছিলো? আমিও তোমাকে ভেবে তাই করেছি! তাই বলে আমার তোমার প্রতি যে প্রেম তা স্বার্থপরতার নয়।
আমি তোমার হৃদয় চেয়েছি। তোমার সঙ্গও চেয়েছি। গঙ্গার ধারে তোমার সান্নিধ্য কল্পনা করেছি। বাংলা দেশে সবুজ প্রান্তর আর দিগন্ত বিস্তৃত পদ্মা নদীর পাশে তোমাকে চেয়েছি। তোমার কাছ থেকে ভালোবাসা চেয়েছি। তোমাকে ভালোবাসতে চেয়েছি। তোমাকে বকুল ফুলে সাজাতে চেয়েছি। শাড়ি পরলে তোমাকে কী অপূর্ব, কী এলিগেন্ট দেখায়। তাই, সেই শাড়ি পরা অবস্থায় তোমার ফটোশুট করতে চেয়েছি। তবে, কি করে বলবে আমি তোমাকে স্বার্থপরের মত ভালোবেসেছি?
আমার তোমার প্রতি ভালোবাসার সীমান্ত কোথায় আমি তা জানি না! মেমসাহেব প্লিজ, তুমি আর আমাকে শাস্তি দিও না। ভালো যদি বেসেই থাকো মেমসাহেব, অনেক হয়েছে। এবার আমাদের আকাশ বাড়িতে ফিরে এসো। এভাবেই থাকবো যতদিন বেঁচে থাকবো। আর, তুমি যদি চাও আমার কাছে চলে আসতে, তাহলে চলে এসো, মেমসাহেব। ধর্ম বর্ণের ঊর্ধ্বে চলে যাবো আমরা।
অনন্যা আর নিজেকে কঠিন করে ধরে রাখতে পারলো না। ম্যাসেজ পড়ে প্রায় ডুকরে কেঁদে উঠলো এবং লিখলো- আসবো, নীল। আমি আসবো।
কিন্তু, কোথায় নীল? ম্যাসেজ দেখেনি! উত্তর অনিশ্চিত! টিভির দিকে চেয়ে থাকা ছাড়া বিকল্প কোনো উপায় যে আর হাত বাড়িয়ে কাছে টানছে না অনন্যাকে আজ!