বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি জানিয়েছে, ২০২০ সালে সমগ্র দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৬ হাজার ৬৮৬ জন এবং এই সঙ্গে আহত হয়েছেন ৮ হাজার ৬০০ জন। এই সময়ে সারা দেশে ৪ হাজার ৮৯১টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে।
শনিবার (৯ জানুয়ারি) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক অনুষ্ঠানে লিখিত বক্তব্যে যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী এই সব তথ্য জানান।
তিনি জানান, গত বছর সড়ক দুর্ঘটনায় মৃতদের মধ্যে ২ হাজার ৩৯ জন চালক, ১ হাজার ৫৯৪ পথচারী, ৭৫৭ পরিবহন শ্রমিক, ৭০৬ শিক্ষার্থী, ১০৪ শিক্ষক, ২০০ জন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ৯১৮ জন নারী, ৫৪১ জন শিশু, ২৯ জন সাংবাদিক, ২৭ জন চিকিৎসক, ৮ জন আইনজীবী, ৫ জন প্রকৌশলী, ১৪৪ জন রাজনীতিক ও ৯ জন মুক্তিযোদ্ধার পরিচয় মিলেছে।
গত বছরের ডিসেম্বর মাসে সর্বোচ্চ ৫৮৬ জন নিহত হয়েছেন। ফেব্রুয়ারি মাসে সর্বোচ্চ ১ হাজার ১৬৯ জন আহত হয়েছেন।
গত বছর রেল দুর্ঘটনায় ৩১৮ জন এবং নৌ দুর্ঘটনায় ৩১৩ জন নিহত হয়েছেন।
সড়ক দুর্ঘটনার ১৫টি কারণ তুলে ধরেছে যাত্রী কল্যাণ সমিতি। এগুলো হলো—১. বেপরোয়া গতি। ২. বিপজ্জনক অভারটেকিং। ৩, রাস্তায় ত্রুটি। ৪. ফিটনেসহীন যানবাহন। ৫. যাত্রী ও পথচারীদের অসতর্কতা। ৬. চালকের অদক্ষতা। ৭. চলন্ত অবস্থায় মোবাইল ফোন বা হেডফোন ব্যবহার। ৮. মাদক সেবন করে যানবাহন চালানো। ৯. রেলক্রসিং ও মহাসড়কে হঠাৎ ফিডার রোড থেকে যানবাহন উঠে আসা। ১০. রাস্তায় ফুটপাত না থাকা বা ফুটপাত বেদখলে থাকা। ১১. ট্রাফিক আইনের দুর্বল প্রয়োগ। ১২. ছোট যানবাহন বৃদ্ধি। ১৩. সড়কে চাঁদাবাজি। ১৪. রাস্তার পাশে হাট-বাজার এবং ১৫. ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন রাস্তায় নামানো।
সড়ক দুর্ঘটনা রোধে কিছু সুপারিশও করেছে সংগঠনটি। এগুলো হলো—
১. সড়ক নিরাপত্তার বিষয়ে বর্তমান সরকারের নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়ন করা।
২. সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করা।
৩. সড়ক নিরাপত্তায় ইত্যিমধ্যে প্রণীত যাবতীয় সুপারিশ বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া।
৪. সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ অনুযায়ী মহাসড়কের উভয় পাশে ১০ মিটার খালি রাখা।
৫. সড়ক-মহাসড়কে রোড সাইন (ট্রাফিক চিহ্ন) ও জেব্রা ক্রসিংয়ের ব্যবস্থা করা।
৬. গণপরিবহন চালকদের প্রশিক্ষণ ও নৈতিক শিক্ষার ব্যবস্থা করা।
৭. সড়ক পরিবহন খাতে অনিয়ম-দুর্নীতি ও চাদাঁবাজি বন্ধ করা।
৮. গাড়ির ফিটনেস ও চালদের লাইসেন্স দেওয়ার পদ্ধতির আধুনিকায়ন করা।
৯. সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা।
১০. দেশব্যাপী চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত মানসম্মত নতুন গণপরিবহন নামানোর উদ্যোগ নেয়া।
১১. ট্রাফিক পুলিশের কর্মকর্তা ও সদস্যদের প্রশিক্ষণের জন্য একাডেমি গড়ে তোলা এবং
১২. গণপরিবহনে সেবা ও নিরাপত্তার মান পর্যবেক্ষণের জন্য দেশের সব মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, সচিব, জেলা প্রশাসকদের প্রতি মাসে একদিন গণপরিবহন ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা।