সবিতা সোমানী
রথমেই খবরটি শুনে কুঁকড়ে উঠেছি নিজের ভেতর! রাজধানীর কলাবাগানে ইংরেজি মাধ্যমে পড়ুয়া এক কিশোরীর (১৭)মৃত্যু হয়েছে ধর্ষণের কারণে, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয় । মেনে নিতে খুব কষ্ট হচ্ছে! কোন দেশ এটি? ধর্ষণের যেন এক মহামারি চলছে দেশে। ঘরে-বাইরে মেয়েদের জীবন আজ বিপন্ন।
আজ মেয়েরা বাবা, চাচা, মামা, খালু, ফুপা, বন্ধু, স্বামী, প্রেমিকসহ কারো কাছেই নিরাপদ নয় । আরো লজ্জা পাই যখন দেখি প্রতিটা ধর্ষণের পরই একদল হাজির হয় সেই ধর্ষণকে জাস্টিফাই করতে। একেবারেই ভুলে যায় এক বাবা মা তাদের মেয়েকে হারিয়েছে ।তাদের মানসিকতা দেখে সত্যিই অবাক হয়ে যাই , এরাও মানুষ? কারো বাবা /মা , ভাই /বোন ,স্বামী/স্ত্রী …। সব দোষ ধর্ষিতার’ এই মানসিকতা এরা পায় কোথা থেকে ? পায় আমাদের ধর্ষন সংস্কৃতি থেকে । কোনো নারী ধর্ষিত হলে তার পোশাক-আশাক নিয়ে প্রশ্ন ওঠে, চলন-বলন নিয়ে প্রশ্ন ওঠে! কী দুর্ভাগ্য আমাদের! ধর্ষিতা যেন নিজেই চেয়েছে তাকে ধর্ষণ করা হোক!
ধর্ষণ সংস্কৃতির অবসান চাইলে সমাজে যেসব ব্যবস্থা, বিশ্বাস বা আচরণ ধর্ষণকে বৈধ করে এবং ধর্ষক তৈরি করে, তা বুঝতে হবে। কেন নারীকে শরীর নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকতে হয় , কেন নারীকে বলা হয় , এখানে যেও না , ওখানে যেও না , এই কাপড় পরো না নইলে পুরুষ তোমার উপর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়বে ,তার ব্যাখ্যা সমাজের মধ্যেই আছে। আমাদের সমাজের প্রেক্ষিতে এসবের কিছু উল্লেখ করবো :
১.ভিক্টিমকে দোষারোপ করা- ধর্ষক এবং তার সাঙপাঙরা বলার চেষ্টা করে ,ধর্ষিতা যৌন সম্পর্ক স্থানে সম্মত ছিল, কিংবা ‘অশালীন’ পোষাক পরেছিলো , কিংবা ছেলেবন্ধুকে বিশ্বাস করে তার বাসায় গেল কেন ?
২. যৌন সন্ত্রাসকে ছোট করে দেখা ( প্রায় বলা হয় ছেলেরা এমনই হয় , এই বয়সে এমন হয়েই থাকে ) ৩. চলচ্চিত্রে, টেলিভিশনে এবং বিভিন্ন মিডিয়ায় আজগুবি সব কর্মকান্ড দেখানো ।( নায়িকার’ না’ মানে ‘ হ্যাঁ ‘, না বলার পরও তার পিছনে লেগে থাকাকে গ্লোরিফাই করা হয় )।
৩ . ছেলেদের শেখানো হয় – তোমরা হবে আধিপত্যশীল, যৌন আক্রমণাত্মক এবং এর বিপরীতে মেয়েদের শেখানো হয় – তোমরা হবে নমনীয় এবং দুর্বল । পুরুষ কীভাবে আচরণ করতে পারবেন এবং নারী কীভাবে আচরণ করবেন—এই দ্বিমুখী শিক্ষার মধ্যেই ধর্ষণের বীজ লুকিয়ে থাকে ।
আপাতত ধর্ষণ বন্ধ হওয়ার কোন সম্ভাবনা আমি দেখছি না । শুধু একটা অনুরোধ করবো খেয়াল করুন, আপনার আশেপাশে কারা বলছে ‘মেয়েটি কেন সন্ধ্যায় বের হলো? মেয়েরা কেন সন্ধ্যার পর বের হবে’? মেয়েটি এই পোষাকে বের হলো কেন ? তার কেন ছেলেবন্ধু আছে ? ইত্যাদি ওদেরকে চিনে রাখুন ওরাই ধর্ষক এবং ধর্ষকের সহকারী। ওরা সবসময় ধর্ষিতা তথা নারীর বিপক্ষে কথা বলে। ওরা এই সমাজেরই নামধারী তথাকথিত শিক্ষিত লোক।
ছবিঃকুঁড়েঘর