সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সরল বিশ্বাসে কৃতকর্ম কোনো অপরাধ নয় জানিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেছেন, তবে সেটি প্রমাণ করতে হবে যে সরল বিশ্বাসে আপনি এ কাজটি করেছেন।
জেলা প্রশাসক সম্মেলনের পঞ্চম ও শেষ দিন বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সম্পর্কিত অধিবেশন শেষে সাংবাদিকদের একথা বলেন দুদক চেয়ারম্যান। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অধীনেই পরিচালিত হয় দুদক।
পাবলিক সার্ভিস অ্যাক্টে বলা হয়েছিল যে, সরল বিশ্বাসে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী যদি কিছু ‘ইয়ে’ করে তাহলে সেটা ইনক্লুড না করা- এক সাংবাদিকের প্রশ্নে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, না, না। এটা সবার কাছে স্পষ্ট যে, এটা কোনো অপরাধ নয়। সরল বিশ্বাসে যদি আপনি কোনো কাজ করেন। ইভেন ইফ ইট ইজ সামথিং বিং, তাও কোনো অপরাধ নয়।
বিষয়টি পরিষ্কার করে জানতে চাইলে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, প্যানেল কোডেই বলা আছে যে, সরল বিশ্বাসে কৃতকর্ম কোনো অপরাধ নয়। জেনারেল এক্সসেফশন বলে এটাকে। কিন্তু এখানে শর্ত আছে, সরল বিশ্বাসটা যেন উইথ কেয়ার অ্যান্ড কসাস হয়। আপনাকে প্রমাণ করতে হবে যে সরল বিশ্বাসে আপনি এ কাজটা করেছেন।
এবারই প্রথম মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সম্পর্কিত আলোচনায় দুদককে আমন্ত্রণ জানানো হয়।
ইকবাল মাহমুদ বলেন, জেলা প্রশাসক মহোদয়রা মাঠপর্যায়ে সরকার ও রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেন। এখানে আমাদের একটি স্লট ছিল দুর্নীতি দমন কমিশনের জন্য।
দুর্নীতি দমনের বিষয়ে ডিসিদের কোনো প্রস্তাব ছিল না- এ বিষয়ে চেয়ারম্যান বলেন, এটা প্রস্তাবের কিছু নেই। তারাও কাজ করছে, আমরাও কাজ করছি, আপনারাও কাজ করছেন। এখন অনেক প্রস্তাব এসেছে আমরা এগুলো খতিয়ে দেখবো।
তিনি বলেন, আদালতে যখন বিজ্ঞ আইনজীবীরা বিট করেন, ওনারা কিন্তু কোর্টের অফিসার হিসেবে বিট করেন। আপনারা যারা গণমাধ্যমের সম্মানিত কর্মী, প্রিন্ট মিডিয়া, আপনারা কিন্তু আমাদেরই অংশ। আমরা মনে করি আপনারা আমাদেরই কর্মকর্তা, আমরা এটা বিশ্বাস করি এবং আপনাদেরও এই বিশ্বাস রাখতে হবে।
দুদক চেয়ারম্যান বলেন, আজ যেটা কথা হয়েছে- প্রতিষ্ঠান গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি নয়। আমাদের দেশের যে সমস্যা ব্যক্তি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে যায়। আমরা সেই থেকে বের হতে চাই। আমরা চাই ইনস্টিটিউশন বিল্ডিং, যেটা এসডিজির ১৬ নম্বরে বলা হয়েছে। প্রতিষ্ঠান তৈরি না করলে জনগণের ক্ষমতায়ন সম্ভব নয়।
প্রশাসনের অনেকে দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত হয়- এ বিষয়ে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, আমরা বলেছি যে স্বচ্ছ, ট্রান্সপারেন্ট, অ্যাকাউন্টেবল গভর্নমেন্ট যাতে হয়, সেই ব্যবস্থা নেবেন।
দুদক চেয়ারম্যান বলেন, জেলা প্রশাসক সাহেবেরা আমাদের কাছে জানতে চেয়েছেন দুর্নীতি প্রতিরোধের জন্য কী করণীয়? আপনারা জানেন যে দুর্নীতি দমন কমিশনের সবচেয়ে বড় কাজটা হচ্ছে দুর্নীতি প্রতিরোধ, দমনটা অনেক পরে আসে। আমাদের কাজটা মামলা করা না, কাজটা হচ্ছে দুর্নীতি প্রতিরোধ করা। দুর্নীতি যদি হয়েই যায়, তাহলে আর কমিশন থাকার দরকার কি আর আমাদের সবারই থাকার দরকার কি?
জেলা প্রশাসক মহোদয়দের আমরা বলেছি, আপনারা দুর্নীতি প্রতিরোধের জন্য আমাদের যে সব প্রোগ্রাম রয়েছে সেগুলো চেষ্টা করবেন বাস্তবায়ন করার। ওনারাও অনেক আনন্দের সঙ্গে বলছেন যে আমরা দুর্নীতি প্রতিরোধের জন্য বিশেষ করে প্রাইমারি ও হাইস্কুলে মানসম্মত শিক্ষা, মূল্যবোধসম্পন্ন শিক্ষা যদি না হয়; তারা সবাই রিয়ালাইজ করেছে এই মূল্যবোধসম্পন্ন শিক্ষা যদি না হয় কোন ডেভেলপমেন্ট টেকসই হবে না।
যদি দুদকেরও কোনো গাফিলতি দেখেন, আমাদের জানান
ডিসিরা দুদকের কার্যক্রমে সহযোগিতা চেয়েছেন কিনা- প্রশ্নে বলেন, জেলা প্রশাসকদের আমরা বলেছি যে আপনারা জেলার সার্বিক তত্ত্বাবধায়ন করেন। মাঠপর্যায়ে আপনারা দুর্নীতি দমন কমিশনের কার্যক্রমও দেখভাল করবেন। সেটা আমরা তাদের একটা ব্লাংকেট দায়িত্ব দিয়েছি- যদি দুর্নীতি দমন কমিশনেরও কোনো গাফিলতি দেখেন, দুর্নীতি দেখেন আমাদের জানান এবং সেটা আপনাদের জানানোর দায়িত্ব।