তালেবানের হুঁশিয়ারির তোয়াক্কা না করেই ২০১৪ সালের আফগান প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট দিয়েছিলেন৷ এজন্য শাস্তিও পেয়েছিলেন সাইফুল্লাহ সাফি। হাতের আঙুল কেটে দিয়েছিল জঙ্গিরা৷ কিন্তু তাতেও দমে যাননি তিনি। বরং হামলার হুমকি মাথায় নিয়েই আবারও ভোট দিয়েছেন তিনি।
শনিবার আফগানিস্তানে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোট গ্রহণ হয়েছে। ভোট দেওয়ার পর ৩৮ বছরের ব্যবসায়ী সাফি টুইটারে নিজের দুই হাতের তর্জনীর ছবি পোস্ট করেন। এতে দেখা যায়, তার ডান হাতের তর্জনীর মাথা কাটা এবং বাঁ হাতের তর্জনীতে ভোট দেওয়ার সময় লাগানো অমোচনীয় কালি।
সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সাফির এই প্রতিবাদ অনলাইনে দারুণ প্রশংসিত হয়েছে। শুধু ভোট দেওয়ার কারণে আঙুল হারানোর পরও এবং আবার একই ঘটনা ঘটার ঝুঁকি মাথায় নিয়েই তিনি ভোট দিয়ে নাগরিক হিসেবে নিজের দায়িত্ব পালন করেছেন।
যদিও অন্যান্য ভোটাররা সাফির মত এতটা সাহসী হতে পারেননি। তাই শনিবারের নির্বাচনে অস্বাভাবিক রকম কম ভোট পড়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দেশটির এক নির্বাচনী কর্মকর্তা বলেন, শনিবার মাত্র ২০ শতাংশ ভোট পড়েছে।
আফগানিস্তানে নিবন্ধিত মোট ভোটার সংখ্যা ৯৬ লাখ ৭০ হাজার। অর্থাৎ, শনিবার প্রতি পাঁচ জনে মাত্র একজন ভোট দিয়েছেন।
এর আগে২০১৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট দেওয়ায় অন্তত ছয় আফগান নাগরিকের আঙুল কেটে দেয় তালেবান যোদ্ধারা; যাদের একজন সাফি।
টেলিফোনে সাফি বলেন, “আমি জানি এটা বেদনাদায়ক একটি অভিজ্ঞতা, এটা শুধুমাত্র একটি আঙুল।”
“কিন্তু যখন আমার সন্তান ও দেশের ভবিষ্যৎ সামনে চলে আসে তখন যদি আমার পুরো হাতও কেটে ফেলে তবু আমি পিছপা হব না।”
কিভাবে তালেবান ২০১৪ সালে তার আঙুল কেটে দিয়েছিল তার বর্ণনায় সফি বলেন, “ভোটের পরদিন আমি রাজধানী কাবুল থেকে পূর্বের নগরী খোস্তে যাচ্ছিলাম। তালেবান যোদ্ধারা আমাকে গাড়ি থেকে বের করে নিয়ে সড়ক থেকে দূরে তাদের বসানো একটি আদালতে নিয়ে যায়।
“কেন আমি তাদের হুঁশিয়ারির পরও ভোট দিয়েছি এটা জিজ্ঞাসা করে এবং আমার আঙুল কেটে দেয়… আমার পরিবার আবারও একই কাজ করতে আমাকে নিষেধ করেছিল। কিন্তু আমি তাদের কথা না শুনে বরং সবাইকে নিয়ে ভোট দিতে গেছি।”
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাফির এ সাহসী প্রতিবাদের ভূয়সী প্রশংসা হয়েছে।
যু্ক্তরাষ্ট্র-তালেবান আলোচনার সময় দেশটির অনেক নাগরিক আবারও তালেবন শাসন ফিরে আসা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছিলেন, কট্টরপন্থি তালেবান আবার ক্ষমতায় এলে দেশের গণতন্ত্র এবং কষ্টার্জিত স্বাধীনতা শেষ হয়ে যাবে।
সাফির টুইটের নিচে একজন লেখেন, “তিনি গণতন্ত্রের পক্ষে ভোট দিয়েছেন এবং তালেবান শাসন ব্যবস্থার বিরুদ্ধে না বলেছেন।”