-এবিএম সালেহ উদ্দীন
বর্তমান সময়ের কিংবদন্তী কথা সাহিত্যিক ছিলেন হুমায়ুন আহমেদ। জীবনের বর্ণবহুল বৈচিত্র আর জ্ঞান-বিজ্ঞানের পুষ্ট-পরিপক্কতার দুয়ার খুলে দেয়ার প্রয়াসে শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে যিনি মানুষের মাঝে সারাজীবন মেতে ছিলেন। স্বপ্ন-সাচ্ছন্দ্যে পরিপূর্ণ সেই মানুষটি এখন পৃথিবীতে নেই। কিন্তু তাঁর সৃষ্টিশীল কর্ম তাঁকে অমর করে রেখেছে। হ্যাঁ কোন এক অতলস্পর্শ বিচ্ছেদ কিংবা অনন্তকে প্রাপ্তির টানেই বাংলা সাহিত্যের নন্দিত কথাশিল্পী হুমায়ূন আহমেদ চলে গেলেন চিরকালের তরে। মৃত্যুর আগেই তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে, এ নশ্বর পৃথিবীতে আর বেশি দিন থাকা হবে না। ক্রমশ: ধূসর হয়ে আসা পৃথিবীর সকল সংশয়ের উত্তরণ ঘটিয়ে তাই তিনি শেষবারের মতো নিজের প্রাণপ্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশে গিয়েছিলেন। জীবনের স্মৃতিময় স্থান সমূহ কিংবা স্পর্শকাতর সবগুলো স্মৃতিচিহ্নকে আর একবার চোখ বুলিয়ে বেশ প্রফুল্লচিত্তে শেষ দর্শনে নিউইয়র্ক ছূঁয়ে পাড়ি জমালেন অবিনশ্বরে। কেউ বুঝতে না পারা কিংবা উপলব্ধি করার আগেই এই অভিযাত্রা।
আসলে মৃত্যুর বাসনা হলে তো তাকে ফিরানো যাবে না। ইহাতো অবধারিত সবার জন্য। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনের বানীই মহাসত্য। “কুল্লু নাফছিন জায়েকাতুল মাউত” (প্রত্যেকেই মৃত্যুর স্বাধ গ্রহণ করতে হবে)। মৃত্যু হচ্ছে অনন্তের অভিযাত্রা। মৃত্যুর মাধ্যমে অনন্ত-অবিনশ্বরের পথ প্রশ্বস্ত হয়। মিল্টন বলেছেন-“মৃত্যু হলো সেই সোনার চাবি যা অন্তরের দরজা খুলে দেয়”। এই ক্ষেত্রে আমরা বলতে পারি যে, বাংলা সাহিত্যের নন্দিত কথা সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ মৃত্যুর মধ্যদিয়ে সমগ্র বাঙালির অন্তরকে খুলে দিয়ে চলে গেলেন। তিনি মানুষের ভালোবাসার পথকে প্রসারিত করে গেছেন। কাজী নজরুল ইসলামের একটি বিখ্যাত গানের লাইন-‘আমি চিরতরে দূরে চলে যাবো তবু আমারে দেবো না ভুলিতে’। সত্যিই হমায়ূন আহমেদও সেরকম অভিব্যক্তি/দৃষ্টান্ত রেখে চলে গেলেন। তাকে সহজে ভুলে যাওয়া সম্ভব নয়। যিনি সব মানুষের অন্তর জয় করেছিলেন। শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতিতে
অসামান্য অবদানের মাধ্যমেই তিনি সব মানুষের কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিলেন। বাংলার মানুষ তাকে কখনো ভুলে থাকতে পারবে না। তিনি চির অনিবার্ণ। মননধর্মী সাহিত্য, প্রাণস্পর্শী নাটক কিংবা চলচ্চিত্রসহ সবকিছুতেই তিনি অসাধারণ অবদান রেখেছেন। বাংলাদেশের ঐতিহ্য গাঁথা লোক সংস্কৃতির শাখা-প্রশাখায় চলাচলও শুরু করেছিলেন তিনি। তাঁর নাটক ও সাহিত্যে আমাদের সুপ্রাচীন লোকজ ঐতিহ্য তথা লোক সংস্কৃতির উপাত্তগুলো ক্রমে ক্রমে স্থান পেতে শুরু হরেছিল। তিনি বাংলার প্রান্তকি মানুষের ভাষাও সংস্কৃতিকে জাগিয়ে তুলবার চেষ্টা করেছিলেন।
বাংলাদেশ তথা সমগ্র বাঙালির আকাশ ছোঁয়া ভালোবাসা অর্জন করে গেছেন। এজন্য তার জনপ্রিয়তা ছিল আকাচুম্বি। জীবনের শেষ দিকটায় নিতান্ত ব্যক্তিগত একটা অনাকাঙ্খিত দোলদোলায়মানে কিছুটা হোছট খেলেও তিনি দমে যাননি। এক মুহুর্তের জন্যেও শিল্পবোধ ও সাহিত্যবোধ থেকে নিস্পৃহ থাকেননি। থেমে যায় নি তার শিল্প ও সাহিত্যকর্ম। অবিরাম সৃজনকর্মে নিজেকে ব্যস্ত রেখেছেন। সংস্কৃতির সকল শাখায় তাঁর অপরিসীম সৃজন ক্ষমতার স্বাক্ষর পাওয়া যায়। সৃজনে, মেধা ও মননে হুমায়ূন আহমেদ যে আকাশছোঁয়া বৈদগ্ধ্যের পরিচয় দিয়েছেন; তা রীতিমত বিস্ময়কর, অতুলনীয়। শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতির মাধ্যমে সব মানুষের মনোরঞ্জন ঘটাতে এবং সর্বস্তরের মানুষের হৃদয় জয় করতে সক্ষম হয়েছিলেন। সকল মানুষের হৃদয় স্পর্শ করতে পেরেছিলেন।
বাংলাদেশের জননন্দিত কথা সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ ছিলেন শহীদ পরিবারের সন্তান। তার বাবা শহীদ বুদ্ধিজীবি। আমাদের মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে এই পরিবারের রয়েছে অসামন্য ত্যাগ ।
মুক্তিযুদ্ধের ভয়াল দিনগুলোর মর্মস্পর্শী বেদনাগাঁথায় একজন সত্যোপোলব্ধির মানুষ হিসাবে প্রথম বিখ্যাত উপন্যাস ‘নন্দিত নরকে’ প্রকাশের মাধ্যমে বাংলাদেশের সাহিত্য জগতে হমায়ূন আহমেদের অনুপ্রবেশ। প্রয়াত বুদ্ধিজীবি ও সাহিত্যিক আহমদ ছফার বদৌলতে সেই উপন্যাসটি ১৯৭২ সালে ঢাকার প্রাচীন প্রকাশনা সংস্থা খান ব্রাদাস থেকে প্রকাশিত হয়েছিল। তার পর থেকে শিল্প-সাহিত্যের পরিমন্ডলে তিনি ঈর্ষনীয়ভাবে পরিচিত হয়ে ওঠেন। আশির দশকের বিটিভিতে বিখ্যাত নাটক ‘এইসব দিনরাত্রি’, ‘কোথাও কেউ নেই, নক্ষত্রের রাত, বহুব্রীহি,’সহ বেশ কয়েকটি নাটক ধারাবাহিক প্রদর্শনের মাধ্যমে হুমায়ূন আহমেদ সমগ্র বাংলাদেশে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন।
অত:পর অবিরাম গতিতে তার সাহিত্যকর্ম চলতে থাকে। অমর একুশে বইমেলায় একটানা তিন দশকের বেশি সময় ধরে হুমায়ূন আহমেদ-এর গল্প-উপন্যাস ও সমস্ত সৃজনধর্মী রচনাশৈলী একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার এবং আকাশচুম্বি জনপ্রিয়তা অর্জন করে। প্রতিটি বইমেলার চমক ও প্রধান আকর্ষন হচ্ছে তার নতুন বই।
জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত বাংলা সাহিত্য জগতে তাঁর এই দাপট ছিল অক্ষুন্ন ও অটুট। শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতিকে তিনি ছিলেন অপ্রতিদ্ব›দ্বী সাফল্যের দাবিদার।
মনে পড়ে, আশির দশকের শেষদিকে শীতকালীন ছুটিতে দেশে ফিরলে আমাকে প্রিয়জনের পক্ষথেকে তার রচিত উপন্যাস ‘এইসব দিনরাত্রি এবং শ্রাবনে মেঘের দিন’বই দু’টি উপহার পেয়েছিলাম। আমি তখন বিদেশে পড়াশুনা করতাম। ঢাকাতে বিটিভির প্রধান আকর্ষন ছিল হুমায়ূন আহমেদ-এর নাটক। আমার মত ব্যস্ততায় নিস্ত থাকা বাংলাদেশের লক্ষ জনতাও তার নাটক দেখার জন্য উদগ্রীব থাকতেন।
নব্বই দশকের গোড়ায় স্বদেশে ফিরেই প্রকাশনা শিল্পে নিজেকে জড়িয়ে ফেলি। এর পাশাপাশি ধানমন্ডীতে একটি প্রি-ক্যাডেট স্কুলও চলতে থাকে আমার পরিচালনাধীনে। মনে পড়ে, প্রকাশনার সূচনায় বাজিমাত করতে না পারলেও বাংলা একাডেমী বই মেলায় দেশের প্রথম সারির কবি,লেখক-সাহিত্যিকের বই নিয়েই আমার পরিচালিত ‘বাড পাবলিকেশন্স’-এর যাত্রা শুরু হয়। দেশের শীর্ষ পত্রিকায় বইমেলায় প্রকাশিত বাড-এর বই’র খবর ও ব্যাপক রিভিউ হতে থাকে। দু’য়েক বছরের মধ্যে ‘বাড পাবলিকেশন্স’ পরিচিত হয়ে ওঠে এবং একটি নিরেট সৃজনশীল প্রকাশনা সংস্থা হিসাবে দাঁড়িয়ে যায়। বইমেলায় অন্যান্য বড় প্রকাশনার মতো ‘বাড’-এরও সমমানের বৃহদাকারের স্টল থাকতো। প্রচুর বই বের হতো। বাংলাবাজারের বিখ্যাত প্রকাশনার মধ্যে কাকলি প্রকাশনী, প্রতীক প্রকাশনা, সময় প্রকাশন থেকে হুমায়ূন আহমেদ-এর প্রচুর বই প্রকাশিত হয়েছে। বইমেলায় আগামী প্রকাশনী, ইউপিএল, মাওলা ব্রাদার্স, অনন্যা, অনুপম প্রকাশনী, বাড পাবলিকেশন্স সহ অনেক স্টল পাশাপাশি পরতো। বাংলা একাডেমী মেলা কমিটি কর্তৃক লটারির মাধ্যমে স্টলের স্থান নির্ধারিত হতো।
একবার একুশের বইমেলায় কাকলি প্রকাশনী ও সময় প্রকাশনীর মাঝে বাড এবং বিপরিতে প্রতীক প্রকাশনার স্টল পড়লো। হুমায়ূন আহমেদ মাঝে মাঝে হঠাৎ মেলায় আবির্ভুত হলেই পাঠক-দর্শক হুমরি খেয়ে পরতেন। মনে পড়ে, সে বছর কাকলির সত্ত¡াধিকারী নাসির আহমেদ সেলিম,সময়-এর ফরিদ আহমেদ এবং প্রতীক-এর আলমগীরসহ তিনজনকে হুমায়ূন আহমেদ একটি উপন্যাস উৎসর্গ করেছিলেন। একদিন পড়ন্ত বিকেলে হুমায়ূন আহমেদ মেলায় ঘুরে বই কিনছেন এবং অকস্মাৎ বাড-এর স্টলে এসে হাজির। সঙ্গে কয়েকজন ভক্ত আর প্রতীক-এর প্রকাশক আলমগীর ভাই। ঐ দিন কাকতালীয়ভাবে আমিও স্টলে ছিলাম। তিনি ‘বাড’ স্টল থেকে ১২টি নতুন বই কিনেছিলেন। তন্মধ্যে ‘বাড’থেকে প্রকাশিত বর্ষীয়ান কথা সাহিত্যিক শ্রদ্ধেয় আবু রুশদ-এর বিখ্যাত উপন্যাস ‘নোঙ্গর ও বিয়োগ বাবা’, কবি ও ভাষা পন্ডিত সৈয়দ আলী আহসান-এর ‘বঙ্গবন্ধু: রকম দেখেছি, বাংলাদেশ: ১৯৭৫, আমাদের আত্মপরিচয় এবং বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ, ‘আমার পছন্দ দেশ-বিদেশের রান্না’, আবুল খায়ের মুসলেহউদ্দীনের ‘আনন্দ ভূবন ও সূর্যোদয়ের দেশে’, আব্দুল মান্নান সৈয়দের ‘ক্ষুধা প্রেম আগুন, প্রবেশ,’ আহমদ ছফার ‘সংকটের নানান চেহারা’সহ উন্নতমানের বইসমূহ তিনি বাড থেকে কিনেছিলেন। উল্লেখ্য, সে বছর সৈয়দ আলী আহসান স্যার একটি বই আমার নামে উৎসর্গ করেছিলেন। মজার ব্যাপার হচ্ছে সেটা হুমায়ূন আহমেদ-এর নজর এড়ায়নি। সেদিনই আমি তাকে হাসতে দেখেছি । তিনি আমাকে কনগ্রাসুলেট জানিয়েছিলেন।
হুমায়ূন আহমেদ অসংখ্য উপন্যাস ও মননধর্মী গ্রন্থরাজি ছাড়াও নাটক/চলচ্চিত্রে অসামন্য অবদান রেখে তিনি চির স্মরণীয় হয়ে আছেন। তার বিখ্যাত সিনেমা ফ্লিম‘আগুনের পরশ মনি ও শঙ্খনীল কারাগার’ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিসৃত সুবিখ্যাত দলীল। যদিও সরকার ক্ষমতায় আসার পর উক্ত ফ্লিমের দু’একটি ডায়লগ অনাকাঙ্খিতভাবে পরিবর্তনের জন্য তাকে চাপের মধ্যে রেখেছিলেন।
বলাবাহুল্য, জীবনের শেষ প্রান্তে অনুরোপ ‘দেয়াল’ উপন্যাসে হুমায়ূন আহমেদকে তার বিশ্বাস ও নীতিবোধের সাথে আপোষ করাবার একটা চাপ সৃষ্টি করা হয়েছে।
একজন লেখকের মননসত্তা ও স্বাধীনতার উপর হস্তক্ষেপ করা যে, একধরনের ধৃষ্টতা(!) সে বিষয়ে তিনি তাঁর সংক্ষুব্ধতার কথা স্পষ্টভাবে বলে গেছেন।
ব্যক্তিগতভাবে কথা-সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ নিজেকে সবার উর্দ্ধে তুলে ধরবার মানসে কিংবা কোন ব্যক্তিগত স্বার্থে নিজের মেধা ও মননকে নিবেদন করেননি। অপার শিল্পবোধ ও সাহিত্যকর্মে তাঁর একনিষ্ঠ দৃঢ়তা, আন্তরিকতা, একাগ্রতা ও দেশ ও গণমানুষের প্রতি গভীর মমত্ববোধ ও ভালোবাসার ফলেই তিনি জনপ্রিয়তার শীর্ষে উঠতে পেরেছেন। মৃত্যুর আগে যেমন প্রবল জনপ্রিয় ছিলেন তেমনই মৃত্যুর পরেও তিনি সকল মানুষের নিকট স্মরণীয় হয়ে আছেন।
আসলে ইতিহাস নিয়ে বাহুল্য আর অতিরঞ্জিত কিছু করা উচিত নয়। আমাদের জন্য একটা চরম দূর্ভাগ্য যে, প্রত্যেক সরকার ক্ষমতায় আসার পর নির্মম হয়ে যান। সরকারের ঔদ্ধত্বের মাধ্যমে ইতিহাসের সত্যবোধের উপর খড়গ চালানোর ধৃষ্টতা দেখানো হয়ে থাকে। এ ধরনের নিচু কাজ জাতির জন্য গøানিকর। আর লেখক হচ্ছেন সমাজের চেরাগ: তার স্বাধীনতার উপর হস্তক্ষেপ করা একধরনের নির্যাতনেরই মতো। এ প্রসঙ্গে হেনরি এ্যাডামস্-এর একটিন বিখ্যাত উক্তি মনে পড়ছেÑ “ইতিহাস এমন নির্মোহ বিষয়, যে কেউ যেখান থেকে ইচ্ছা তাকে গ্রহণ করতে পারে। তা নিয়ে কোন বাড়াবাড়ি উচিত নয়। এমন হলে নিজেই তা ভেঙে পড়ে”। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে যার যে অবদান তার মর্যাদা নিয়ে প্রশ্ন তোলা উচিত নয়। কেউ করলে তা সংকীর্ণতা ও হীনমন্যতারই পরিচায়ক।
পৃথিবীতে যেমন বাংলাভাষার জন্য প্রাণ দিয়ে বাংলাদেশের সূর্যসৈনিকেরা ইতিহাসে অস্মরণীয় হয়েছে। তেমনি হুমায়ুন আহমেদ তার কথা সাহিত্য দিয়ে বাঙালিদের মাঝে বিখ্যাত হয়েছেন। অবিস্মরণীয় হয়েছেন। বইমেলায় যার বই লাইন দিয়ে কিনতে হয়(!) এরকম দৃষ্টান্ত তিনিই স্থাপন করেছেন। তার বই’র সাথে অন্য অনেক লেখকের বই বিক্রি হয় এমন মন্তব্য পশ্চিম বাংলার লেখকগণও করেছেন। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, সমরেশ মজুমদার, জয় গোস্বামীসহ বিখ্যাত কবি ও লেখকগণ অকপটে স্বীকার করেছেন।
এ প্রসঙ্গে আরেকটি স্মৃতি মনে আসছে। আশির দশকের শেষদিকে একবার পাকিস্তান গিয়েছিলাম। যদিও বহি:র্বিশ্বে আমার পড়াশুনা করার সময়ে ভিসা সংক্রান্তে তার আগে/পরে কয়েকবার সে দেশে যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল। একবার ইসলামাবাদের দর্শনীয় স্থান ঘুরে দেখার সময় একটি মার্কেটে দেখি দীর্ঘ লাইন। সংগে ছিল আমার গাইড এক বিদেশী ছাত্রবন্ধু।
দীর্ঘ লাইন সম্পর্কে বন্ধুকে প্রশ্ন করলে, উত্তরে সে বলল একটি সাহিত্য বিষয়ক ম্যাগাজিন/ডাইজেষ্ট কেনার জন্য এই দীর্ঘ লাইন। ম্যাগাজিনটির নাম ‘ছাইয়্যারা ডাইজেষ্ট’। অবাক হবার মতো। তারপর আমি স্বগর্বে তাকে বললাম; আমাদের দেশেও একজন বিখ্যাত লেখক আছেন। যার বই প্রকাশের পর লাইন দিয়ে কিনতে হয়। তার নাম হুমায়ূন আহমেদ। বন্ধুটি অবাক বিস্ময়ে আমার দিকে তাকালো এবং ধন্যবাদ জানালো।
কথা-সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ’র মৃত্যুর পর কলকাতার বুদ্ধিজীবী কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, সমরেশ মজুমদার ও শীর্ষেন্দু সমবেদনা জানিয়ে বলেছিলেন যে, হুমায়ূন আহমেদের বই থাকার ফলেই ঢাকার বইমেলায় তাদের বই বিক্রি হত। তার বইয়ের সাথে অন্যান্যদের বইও ক্রেতাকে ধরিয়ে দেয়া হত।
সত্যিই হুমায়ূন আহমেদ শিল্প-সাহিত্যে বাংলাদেশে সে নজীর স্থাপন করেছেন। তিনি আমাদের সাহিত্য জগতে বিশাল পাঠক তৈরি করে যেতে সক্ষম হয়েছেন। তিনি আমাদের গর্ব। একজন কিংবদন্তী কথা-সাহিত্যিক।
বাংলা সাহিত্যের জাগরণে হুমায়ূন আহমদের অবদান চিরকাল অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে। দিন যত যাবে হুমায়ূন আহমেদ এর রেখে যাওয়া অবদানের কথা বাংলার সাহিত্য জগতে সর্বদাই উপলুব্ধ হবে। কখনো তার প্রয়োজন ফুরাবে না। তিনি অমর। অনির্বাণ। কবি গুরু রবীন্দ্রনাথের একটি বিখ্যাত লাইন দিয়ে শেষ করছি।
-“ফিরবে না তা জানি/ আহা, তবু তোমার পথ চেয়ে জ্বলুক প্রদীপ খানি।”