আলহামরা নাসরিন হোসেন লুইজা
মহামারি, সংকট, দুর্ভিক্ষ এটা পৃথিবী সৃষ্টি থেকেই আছে ।তবে সব সময় দেখা গেছে প্রতি ৫০/ ১০০ বছর পর পর পৃথিবীতে এমন দুর্যোগ আসে। এমন কোন জায়গা, এমন কোন মিডিয়া খুঁজে পাওয়া যাবে না, যেখানে করোনা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে না ।কোথাও আশার বাণী শোনাচ্ছে কখনো বা সংবাদ শুনে, দেখে আমরা আতঙ্কিত ও শঙ্কিত হচ্ছি। তবে কেন যেন মনে হচ্ছে সব কিছু গা সওয়া হয়ে গেছে ।আমরা অতি মাত্রায় মেকানিক হয়ে গেছি।খুব অল্প সময় নিয়ে আমরা আমাদের অস্তিত্ব নিয়ে ভাবি বা চিন্তা করি। তাই যদি না হবে ,তবে নিম্নের বিষয়গুলো সবাইকে ভাবতে এবং হৃদয় দিয়ে অনুধাবন করতে বলছি, প্লিজ শুধু পড়ার জন্য পড়বেন না……..
একটি দেশ (বাংলাদেশ আলোচনায়)-
ধনী:– কাকে বলে ধনী? আপাতদৃষ্টিতে যার অর্থ প্রতিপত্তি আছে, তাকেই আমরা ধনী বলছি ।ঠিক আছে ,আমাদের দেশে বর্তমানে লাখের অধিক ধনী ব্যক্তি আছেন।
কৃপণ :-সেই ব্যক্তি কৃপণ, অর্থ প্রতিপত্তি দুটোই আছে কিন্তু নিজের বা অন্যের জন্য খরচ করতে তার কলিজায় বাঁধে । কথায় আছে “কৃপনের ধন পোকায় খায় “।একটা গল্প কমবেশি সবার জানা তবুও আবার স্মরণ করছি। একজন কৃপনের একটা জামা ছিল ,যখন জামা ছিঁড়ে গেল তখন গামছা বানায়, গামছার অবস্থা যখন শেষ তখন রুমাল বানায়, রুমাল যখন নেকড়া তখন আগুনে পুড়ে ছাই বানায়, সেই ছাই দিয়ে দাঁত মাজে আর বলে আমার টাকাটাই জলে গেল।
মধ্যবিত্ত:– এই ধনী আর কৃপণ এর মাঝে অবস্থান করে মধ্যবিত্ত। এদের অবস্থা “মাইনকা চিপা” না পারে উপরে যেতে না পারে নিচে। ফলে তাদেরকে বোঝার জন্য কোন প্রাণিকুল আছে বলে আমার মনে হয় না। কি আর করে, মনের দুঃখে ভাটিয়ালি গান শোনে আর সন্তান-সন্তাদিকে বলে কি করবে বাবা ,আমি এটুকুই পেরেছি ।ভাগ্যকে দোষ দেয় এটাও এক ধরনের আত্মপক্ষ সমর্থন ,আর নিজের মধ্যে খুঁজতে থাকে ,বারে বারে আঁতকে ওঠে।
গরিব:– ধনী ,কৃপণ ,মধ্যবিত্ত ,যে যার মতো চলছে ।সুখে থাক, দুখে থাক তবুও ভালো থাকে গরিব ।তার হারানোর কিছুই নাই । তিনবেলা মোটা ভাত-কাপড়ে চলতে পারলেই হলো ।তবে পুঁজিবাদের মূলমন্ত্র গরিব ।গরিব শ্রেণির মাথায় লাথি দিয়ে ধনী,কৃপণের জন্ম ।তাই যদি না হবে করোনার মত দুর্যোগে গরিবের কান্নার শব্দ ধনির কানে পৌঁছে না,কৃপণ শুনতে পায়না। তাই গার্মেন্টস কর্মীদের নিয়ে ছক্কা পাঞ্জা খেলা। গরিব ,মেহনতী মানুষ নিজেকে নিয়ে উদভ্রান্ত। সাহায্যের ক্ষেত্রে গরিবেরা মধ্যবিত্তকে পাচ্ছে না
তবে কথা থেকে যায়, যখন মধ্যবিত্ত আর গরিব একাত্মতা ঘোষণা করে মাঠে নামে তখন কৃপণ লুকিয়ে থাকে , সে সময় ধনী যাবে কোথায়?
শাসক:- শাসকশ্রেণী- ধনী ,মধ্যবিত্ত, ও গরিব তিন শ্রেণীকেই নিজের ইচ্ছ মত নাচায় । এতে মিথ্যের পাহাড় হলে কি বা আসে যায় ?পাহাড় টপকানো কি মুখের কথা !ধনী হয়তো পারবে ,তবে মধ্যবিত্ত, গরিব পাহাড়ের পাদদেশে দাঁড়িয়ে ,মাথা উঁচু করে আকাশও দেখে না, পাহাড়ও দেখে না ,প্রতীক্ষার দিন গুনে।
জ্ঞানী :– জ্ঞান অর্জন করতে করতেই তো জ্ঞানী। ভালো-মন্দ যে অর্জনই হোক না কেন, সে জ্ঞানী। আমরা সাধারণত যারা কোন বিশেষ বিষয়ে অভিজ্ঞ তাকে জ্ঞানী বলে আখ্যায়িত করি। হায়রে আমার দেশের জ্ঞানী সন্তানেরা লুকিয়ে থাকে খাটের নিচে ,না হয় অন্ধকার ঘরে। যারা একটু চালাক জ্ঞানী পালিয়ে যায় দেশান্তরে। মনে করে ,”ওপারেতে সর্ব সুখ আমার বিশ্বাস।” বিদেশে অনেক মেধাবী বাংলাদেশি মৃত্যুবরণ করেছেন ।তারা কেউ ২০বছর /২৫ বছর আগে এদেশের সঙ্গে বেইমানি করে চলে গেছে তবে সরকারের ঘরে বিদেশি রেমিটেন্স এসেছে। অনুন্নত দেশের জন্য হয়তো এটাই অনেক। তবে আমি বলব দেশের আলো বাতাসে বড় হয়ে দেশের কাজে নিজেকে ব্যবহার না করা এক ধরনের আত্মঘাতী ও স্বার্থপরতা ।এই অনুন্নত দেশ তাকে তৈরি করার জন্য অনেক ভর্তুকি দিয়েছে ।তারা কি এদেশকে ভালোবাসে, না নিজেকে। ভাগ্যিস গোটা বিশ্ব কারোনায় আক্রান্ত, যদি শুধু আমাদের মত দেশেই হত তবে দেশত্যাগী অভিবাসীদের টিকা টিপ্পনীতে টেকাই যেত না। মানতে হবে -“দূর থেকে কাশবন ঘনই মনে হয়”।
মূর্খ :- যার কোন অক্ষর জ্ঞান নাই, সেই তো মূর্খ। মূর্খের অশেষ দোষ ।তবে মূর্খ হওয়ার মজাও আছে।যদি ভুল বা অন্যায় করে ফেলে এক কথায় শেষ – মূর্খ তাই বোঝে কম কিন্তু মূর্খরা দেখে,শুনে -এক্ষেত্রে জ্ঞানীদের চেয়ে ভালো ভালো কথা বলেন। বর্তমানে এদের জয় জয়কার ।এতে একশ্রেণী বেশ বাহবা দিচ্ছে। যারা একটু জ্ঞানী তারা ধরে ফেলছে অসামাঞ্জস্য মূর্খদের কথাবার্তা । আগামীতে সংশোধন হবে।
এই যদি হয় একটি দেশের নাগরিকের চালচিত্র। তবে আমরা সাধারণ জনগন কি বলব দ্রুত উন্নতি ?পাঠক আপনারাই বলুন …। মনে হয় ধ্বংস অনিবার্য।
দেশে কারোনা আক্রান্তের সংখ্যা গাণিতিক হারে বাড়ছে ।একজন দরদী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একা কি করে পরিস্থিতির মোকাবেলা করবেন। তিনি প্রতিদিন প্রেস কনফারেন্স করছেন বিভিন্ন জেলার সঙ্গে। বারবার বলছেন ,আপনারা ধৈর্য্য ধরেন এবং ত্রাণ সঠিক, পরিকল্পনা মাফিক ন্যায্য পাওনাদারকে বুঝিয়ে দিন ।আপনারা ঘরে থাকার চেষ্টা করুন ।ভয় পাবেন না ,বৈশ্বিক পরিস্থিতি দ্রুতই ঠিক হয়ে যাবে।কেন আমরা তাঁর কথাকে মূল্যায়ন করছি না? তিনি একা সেনাপতি ঠিক থাকলে হবে কি করে , সৈনিক গুলোকে ঠিকমতো যুদ্ধ পরিচালনা করতে হবে। তবেই আমরা এই যুদ্ধে জয়ী হব ।
পরিশেষে বলি -যে জাতি তার শিশুদের বিড়ালের ভয় দেখিয়ে ঘুম পাড়ায তারা সিংহের সঙ্গে লড়াই করা কিভাবে শেখাবে?
যারা পানিতে ডুবে যাওয়ার ভয়ে তার সন্তানকে ডোবায় নামতে দেন না , কিভাবে সে সন্তান আটলান্টিক পাড়ি দেবে?
শিক্ষক, লেখক, সমালোচক, রাজনীতিবিদও সমাজসেবী,
চেয়ারম্যান
বর্ণ গ্রুপ, ঢাকা ,বাংলাদেশ।