মোহাম্মাদ হাবিব উল্লাহ দুলাল,টরন্টো কানাডা।
“আছে দুঃখ, আছে মৃত্যু, বিরহদহন লাগে। তবুও শান্তি, তবু আনন্দ, তবু অনন্ত জাগে”
~ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
তথ্য সূত্রঃ সংগ্রহ এবং স্বীয় গবেষণা
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) জানিয়েছে নতুন করোনা ভাইরাসের কারণে হওয়া রোগের আনুষ্ঠানিক নাম কোভিড-১৯।
জেনেভায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান টেড্রোস অ্যাডাম গেব্রেইসাস (Dr Tedros Adhanom Ghebreyesus) সাংবাদিকদের বলেছেন, “এখন রোগটির একটি নতুন নাম রয়েছে আমাদের কাছে। সেটি হলো কোভিড-১৯।” এটি ‘করোনাভাইরাস ডিজিজ ২০১৯-এর সংক্ষিপ্ত রূপ।
এই ভাইরাসে মৃত্যুর সংখ্যা এক হাজার ছাড়ানোর পর এই ঘোষণা এলো।
এই কোভিড-১৯ একটি ছোঁয়াচে রোগ যা’ মানুষের সংস্পর্শেই এর সংক্রমণ হওয়ায় সারা বিশ্ব আক্রান্ত এবং সারা বিশ্ব এখন একটি ক্রান্তিকাল সময়ের ভেতর পার করছে। এখানে মানব জাতি একটি অদৃশ্য প্রাকৃতিক প্রতিপক্ষের সাথে ভয়ংকর যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে। এই যুদ্ধে দৃশ্যত কোনো অস্ত্র নেই। এক পক্ষের অস্ত্র হচ্ছে “নৈতিক বিষ” রোগজীবাণু বা VIRUS. অন্যপক্ষ অর্থাৎ মানবজাতি শুধু প্রতিরোধ করতেই হিমশিম খাচ্ছে। অথচ প্রাণ সংহার প্রতিদিন বেড়েই চলেছে। এই যুদ্ধে কোন পক্ষেরই ভারী কোন মারণাস্ত্র – ট্যাংক কামান বোমা গোলাগুলি নেই।
এক কোভিড লাখ লাখ মানুষের স্বপ্ন, জীবন যাত্রা সব এলোমেলো করে দিয়েছে।
হেরে যাওয়া, ফিরে যাওয়া মানুষগুলোর জন্য শুধু কষ্টই বাড়ে, কে জানে কাল হয়তো এই দলে আমাদের যে কেউ থাকবো।
জুন ২০, ২০২০ তারিখ অনুযায়ী বাংলাদেশে বিশ্বমহামারি করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৫৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এতে করোনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল এক হাজার ৩২ জনে। একই সময়ে আক্রান্ত হিসেবে সনাক্ত হয়েছেন আরও তিন হাজার ১৯০ জন। ফলে করোনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ৭৪ হাজার ৮৬৫ জনে।
********************************
TOTALS IN BANGLADESH
(As of June 22, 2020)
Confirmed: 116K+3,480
Recovered: 46,755
Deaths: 1,502+38
TOTALS WORLDWIDE:
Confirmed; 9.06M+183K
Recovered: 4.49M
Deaths: 471K+4,742
********************************
আমাদের শিরোনাম তৃতীয় বিশ্ব যুদ্ধ, তাই বিগত বিশ্বযুদ্ধের কিছু ধারণা নেয়া আবশ্যক।
বিগত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ মানবসভ্যতার ইতিহাসে এযাবৎকাল পর্যন্ত সংঘটিত সর্ববৃহৎ এবং সবচেয়ে ভয়াবহ অস্ত্র যুদ্ধ। এই যুদ্ধে পৃথিবীব্যাপী চল্লিশ লক্ষাধিক মানব জীবন মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছিল।
১৯৩৯ সাল থেকে ১৯৪৫ সাল, এই ছয় বছর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়সীমা ধরা হলেও ১৯৩৯ সালের আগে এশিয়ায় সংগঠিত কয়েকটি সংঘর্ষকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অংশ হিসেবে গণ্য করা হয়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয় ১৯৩৯ সালে। সে সময় মুখ থুবড়ে পড়ে বৈশ্বিক অর্থনীতি। বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণের ফলে বৈশ্বিক অর্থনীতি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের চেয়েও ভয়াবহ মন্দায় পড়েছে।
মঙ্গলবার (৯ জুন) বিশ্বব্যাংকের প্রধান কার্যালয় ওয়াশিংটন ডিসি থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিশ্বব্যাংক বলছে, বৈশ্বিক অর্থনীতি এখন সবচেয়ে ভয়াবহ অর্থনৈতিক মন্দায় পড়েছে। সব অঞ্চলে মাথাপিছু আয় সংকোচনের পাশাপাশি বাড়ছে বেকারত্বের হাহাকার। চলতি ২০২০ সালে বিশ্বের মোট দেশজ উৎপাদন (GDP) ৩ শতাংশ সংকোচন হবে। তবে পরের বছরে অর্থাৎ ২০২১ সালেই বৈশ্বিক জিডিপি ঘুরে দাঁড়াবে। কিন্তু করোনা ভাইরাসের (Covid-19) আক্রমণ বিশ্বে সমান্তরালে থাকা স্বত্ত্বেও তখন জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার হবে ৫.৯ শতাংশ।
বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস অনুসারে, বৈশ্বিক অর্থনীতি চলতি বছর ৫.২ শতাংশ কমে যাবে। এটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে ভয়াবহ মন্দা।
কেননা ১৯৪০ সাল থেকে মাথাপিছু আয়ের ক্ষেত্রে সব সময় ইতিবাচক ছিল, তবে এবার অর্থনীতিবিদরা এর নেতিবাচক অবস্থা হবার আশংকা করছেন।
করোনা ভাইরাসের (কোভিড-১৯) প্রভাবে অভ্যন্তরীণ চাহিদা ও সরবরাহ, বাণিজ্য এবং অর্থনীতির সব খাত মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে। ২০২০ সালে অর্থনৈতিক কাজ ৭ শতাংশ কম হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। উদীয়মান বাজার ও উন্নয়নশীল অর্থনীতি (ইএমডিই) এবছর ২.৫ শতাংশ কমবে। যা’ গত ৬০ বছরে হয়নি। মাথাপিছু আয় ৩.৬ শতাংশ কম হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে, যা এই বছর লাক্ষ লক্ষ মানুষকে চরম দারিদ্র্যের দিকে ঠেলে দেবে।
বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য, পর্যটন, পণ্য আমদানি রপ্তানি এবং যেখানে বৈদেশিক অর্থায়নের নির্ভরতা রয়েছে সেখানে মারাত্মকভাবে আঘাত হেনেছে এই কোভিড-১৯। ছাত্রদের পড়াশোনায় বাধা ও প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় মানুষের আর্থিক ব্যয়ের উপর স্থায়ী প্রভাব পড়েছে।
বিশ্বব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট বলেন, কোভিড-১৯ গভীরভাবে বিশ্বকে সংকটে ফেলে দিয়েছে। বিশ্বব্যাপী বড় ধরনের অর্থনৈতিক ঝুঁকি রয়েছে। আমাদের ব্যবসার প্রথম নীতি হলো বিশ্ব স্বাস্থ্য ও অর্থনৈতিক বিষয়ে আবশ্যিকভাবে সমাধান করা। এর বাইরে আরও বেশি মানুষ দারিদ্র্য ও বেকারত্বের কবলে পড়বে। বিশ্বব্যাংক আরো জানায়, বৈশ্বিক অর্থনীতি অত্যন্ত অনিশ্চিত এবং নেতিবাচক ঝুঁকিতে রয়েছে। সেই কারণে বিশ্বব্যাপী অর্থনীতি এবছর ৪℅ সংকোচন হতে পারে।
অদৃশ্য এই ভাইরাস কোভিড-১৯-এর দ্বারা নিশ্চিত আক্রান্তঃ ৯০,৬২,৮৩৭ এবং মৃতঃ ৪ লক্ষ ৭০,৭১৬ যা’ কোনো প্রকার অস্ত্রযুদ্ধ ছাড়াই শুধুমাত্র কোভিড-১৯ এর আক্রমণের শিকার।
তাই নিশ্চিতভাবে এটিকে আমরা তৃতীয় বিশ্ব যুদ্ধ হিসেবে আখ্যান করতে পারি।
দয়া করে মনে রাখবেন, এখন পর্যন্ত গত ২০ বছরে আবির্ভূত ৭ ধরণের করোনা ভাইরাসের মধ্যে “সার্স ” ও “মার্স” ছাড়া কোনটিই নির্মূল হয়নি। ঘুরে ফিরে বাকি ৪টি করোনা ভাইরাস মানুষকে আক্রান্ত করে, জ্বর সর্দি কাশি হতেই থাকে। করোনায় সৃষ্ট জ্বরের জন্য উন্নত বিশ্বে প্রতিবছর সরকারি খরচে ‘ফ্লু-শট’ নিতে হয়। সুতরাং করোনা ভাইরাস সহসাই নির্মূল হবে না। পৃথিবীর ন্যূনতম ৮০ শতাংশ মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হবার আগ পর্যন্ত এর থেকে মুক্তি নেই। সুতরাং ভয়ে আধমরা হয়ে যাবেন না। মনে রাখবেন শুধুমাত্র টেস্ট করা মানুষদের মধ্যে ৭২ লক্ষ করোনায় আক্রান্ত হলেও, টেস্ট হয়নি এমন আরও লক্ষ লক্ষ মানুষ ইতিমধ্যে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন এবং বেশীরভাগ মানুষ সুস্থও হয়েছেন।
এই রোগ থেকে বাঁচতে হলে সতর্কতার কোনো বিকল্প নেই। সেজন্যে আমরা সামাজিক দূরত্ব মেনে চলি, জনসমাগম এড়িয়ে চলি, নিজের পরিবেশ পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখি এবং গুজব ছড়ানো থেকে বিরত থাকি আর গুজবে বিশ্বাস না করি। যদিও কিছু কিছু বক্তা জনসমাগম করে কোন তথ্য উপাত্ত ছাড়াই তাঁদের মনগড়া মুখরোচক বক্তব্য এবং বক্তৃতায় এই ভাইরাসকে নিয়ে গুজব ছড়াচ্ছেন। সরকারের উচিৎ এসব গুজব কঠোরভাবে দমন করা।
এসব আমরা নিশ্চিত করতে পারলেই এই রোগকে প্রতিহত করতে পারি। অর্থাৎ এই কোভিড-১৯’র নিয়ন্ত্রণ সম্পূর্ণভাবে আমাদেরই হাতে।
তাই নিশ্চিতভাবে এটিকে আমরা “তৃতীয় বিশ্ব যুদ্ধ” হিসেবে আখ্যান করতে পারি।