নিশাকে শুধায়, হিন্দী জানো না? মাথা নাড়ে। আবার শুধায়, বোঝোও না?
কিছু কিছু। কয়েকটা শব্দ, যেমন নমস্তে শুকরিয়া।
পেয়ার মানে বোঝো তো?
একটু লজ্জা পায় এবার। বলে, বুঝি। লাভ।
হেলিম এবার বিড়বিড় করে বাংলায় বলে, ওইটা বুঝলেই চলবো।
নিশা বলে, তোমরা কোন ভাষায় কথা বলছো?
হেলিম বলে, বাংলা।
এটা হিন্দী না!
না। ভিন্ন ভাষা।
একটু চুপ থেকে বলে, আমি কি কিছু শিখতে পারবো?
হেলিম তাকায় আমার দিকে। তারপর বলে, অবশ্যই। কয়েক দিন আমার বন্ধুর সাথে থাকো। সে তোমাকে সব কিছুই শিখিয়ে দেবে।
আমি দেখি হেলিম ওর সাবজেক্টে যেতে চাইছে। সড়িয়ে আনতে হয়। শেষে কোন কথা থেকে কি বলে বসে! মেয়েটা একটা বাজে ধারনা করে বসবে। নাশতার প্যাকেট খুলতে খুলতে ডাকি নিশাকে। বলি, নাও সারা দিন না খেয়ে বসে আছো। এখন কিছু খাও।
বেশ অনেকই এনেছে হেলিম। সিঙ্গারা, চিকেন স্যান্ডউইচ, চপ। বলি, এত আনার কি দরকার ছিলো। একটু পর তো রাতের খাবারই খাবো।
তাকায় আমার দিকে অর্থপূর্ন দৃষ্টিতে। আস্তে করে বলে, কাইল সারা রাইত খালি চাইয়া থাকলেন। আপনে খাইবেন রাইতের খাওন!
চাপাকন্ঠে ধমকে উঠি, এই মিয়া কি বলেন। মান সম্মান নষ্ট করবেন নাকি মেয়েটার কাছে!
সেও গলা নীচু করে বলে, বাংলায় কইতাছি তো। বুঝবো না।
না বুঝলেও মেয়েরা টের পেয়ে যায়। চুপ থাকেন এখন। আমার ধমকে চুপ হয়ে যায় হেলিম। তবে বারবার তাকাতে থাকে নিশার দিকে।
খেতে শুরু করি আমরা। হেলিমও নেয় কিছু। বেশী খাওয়া গেলো না। নিশা নিলো শুধু একটা স্যান্ডউইচ আর এক কাপ চা। আমরা দু’জনও অল্পই। রয়ে যায় অর্দ্ধেকটা। এরপর আরো কিছক্ষন কাটিয়ে উঠি। হেলিম সিরিয়াস হয়ে যায় হঠাৎ। নিশাকে বলে, কিচ্ছু ভেবোনা। আমার বন্ধু সব বলেছে তোমার ব্যপারে। আমরা এখানে অনেক বাঙ্গালী আছি। সবাই তোমার সঙ্গে থাকবো। আর আমার বউ একজন চায়নীজ। ওর এক কাজিন পুলিশ অফিসার। দরকার হলে তার সাহায্যও নেয়া হবে। কাজেই তোমার কোন চিন্তা নাই। এখানে থাকো। খাও দাও ঘুমাও। আর আমার বন্ধুর টেক কেয়ার করো, ওকে?
নিশা ইন্নোসেন্টের মতো ঘাড় নেড়ে বলে, সে আমার ভগবান।
হেলিম একটু টাশ্কা খেয়ে তাকায় আমার দিকে। অষ্ফুটে বলে বাংলায়, এইটা আবার কি কেস!
আমি তার ইঙ্গিতটা চাপা দিতে একটু হেসে ইংরেজীতে বলি, আরে দ্যাখেন না, আমি তাকে একটু সাহায্য করছি, আর সে আমাকে তার ভগবান মনে করে বসে আছে।
রিয়েলি! হেলিমের চোখে যেন দ্যুতি খেলে যায়। তারপর বলে নিশার উদ্দেশ্যে, গুড গুড। নিয়মিত ভগবানের পুজা করবে, ভোগ টোগ দেবে। তাহলে ভগবান খুশী থাকবে। তোমার কাজ হবে।
না: এই বাচালটা আর মানসম্মান কিছু রাখবে না। হাতটা টেনে ধরে বলি, এখন চলেন তো। নিশার ভাব দেখে মনে হলো সে অতটা বুঝতে পারে নাই হেলিম কি বললো। একটু বোকার মতো তাকিয়ে থাকলো। আমি দরজার দিকে পা বাড়াই। বলি, রিল্যাক্স করো। আমি কিছুক্ষনের মধ্যেই ফিরে আসবো।
ঘাড় নাড়ে। হেলিম ‘বাই’ বলে। আমরা বের হয়ে আসি রুম থেকে। বাইরে বেড়িয়েই দেই হেলিমকে একটা ধাতানি। মিয়া, আর একটু হলেই তো দিয়েছিলেন বারোটা বাজিয়ে। বুঝতে না পেরে তাকায় মুখের দিকে। বলি, এইভাবে কেউ কথা বলে কোন মেয়ের সমানে?
ক্যান! খারাপটা কি কইলাম?
Disclaimer:
The editorial team is not responsible for the content of the writing.