মার্চ মাসের ২৬ তারিখ, ২০২০।একটি বিবৃতি দিয়েছিলাম আসন্ন খাদ্য সংকট মোকাবেলা করতে বাংলাদেশের খেটে খাওয়া দিন মজুরের পাশে থাকার। তখনো করোনা মোকাবেলায় সরকারী অনুদান বরাদ্দ হয়নি। আমরা কানাডার টরন্টো শহরে থাকা কিছু পরবাসী। দেশের জন্য উদ্বেগে এক হয়ে অন্টারিও বাংগালী কালচারাল সোসাইটি সংগঠনের পক্ষ থেকে কাজে নামার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি।উদ্দেশ্য ছিলো বিন্দুবিন্দু জলে সিন্ধু গড়ার।
অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ যখন বিশ্ববাসীর মাথায় ঝুলছে তখন কে কাকে সাহায্য করবে, সেই ছিলো আমাদের চ্যালেন্জ। তাই ধার্য হলো অত্যন্ত সামান্য অর্থ ১০ ডলার বা বাংলাদেশী ৬০০ টাকা পরিমান সাহায্য চেয়ে পাঠানো হবে, সকলের কাছে । আমাদের লক্ষ্য থাকবে ১০০০ জন সদস্য এগিয়ে আসবেন। কনফারেন্স কলে মাসিক সভায় নির্বাহী সম্পাদক ফারহানা পল্লবের প্রস্তাবে সম্পূর্ণ সমর্থন করেন পরিচালক ড: মোহাম্মদ হোসেন টিপু,সভপতি জসিমউদ্দিন ও অপর পরিচালক মোনা দেওয়ান। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমি অনুরোধ করি আই টি ব্যাবস্থাপক ‘গো ফান্ড মি’ একটি সিকিউর্ড সাইটে সংগঠনকে অন্তর্ভুক্ত করতে। তিনি আমার কাছে ছবি আর লেখা চাইলেন। উনি সারাদিন কাজে থাকেন তাই আমরা কাজটা শুরুই করলাম বেশ রাত করে। পলাশ আর তার স্ত্রী অপর পরিচালক ড: জিনি হ্যামিলটন থেকে, আমি স্কারবোরো বাসায় বসে। আর মিশন হিউম্যানিটির কানিজ সুলতানা ঢাকায় বসে (ছবি পাঠিয়ে) একনাগারে কাজ করে রাত ৩টায় কাজটা শেষ করা গেলো।
পরেরদিন থেকে দারুন উৎসাহের সাথে সকলকে লিংক পাঠানো হলো, সকল সদস্য বিপুল উৎসাহের সাথে শেয়ার করা, কথা বলা, পরিচিতজনদের থেকে ব্যাক্তিগত যোগাযোগের মাধ্যমে ১০০০$ উঠে গেলো ৩/৪ দিনের মধ্যেই। এই কর্মকান্ডে সংগঠনের মাহবুবা উদ্দিন আলো, ইয়াসমিন খায়ের, বাহাউদ্দিন রতন সহ সকল সদস্য অনুদানের বিষয়টি প্রচার করতে শুরু করেন। সংগঠনের বাইরে থেকেও আমার প্রিয় বান্ধবী Lailac Anna লুসি সুদূর ভ্যান্ক্যুভার থেকে প্রচুর সাহায্যের ব্যাবস্থা করে চলেছে। অন্যদিকে বাংলাদেশে কাকে দিয়ে এই লকডাউনের সঙ্গীন সময়ে এই ত্রাণ বিতরন করা হবে সে বিষয়ে ।
আমার বান্ধবী কানিজ সুলতানা লাকী হাত বাড়িয়ে দিলো সহযোগিতার। তাদের সংগঠন মিশন হিউম্যানিটি যেখানে আমারো জড়িত থাকার সৌভাগ্য হয়েছে, তারা নিজেরা তহবিল তুলে বিভিন্ন পর্যায়ে দিন মজুরদের ১০০ পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে। তার ব্যাবস্থাপনায় আমরা তহবিলের প্রথম পর্বের টাকা পাঠিয়ে দিলাম। মিশন হিউন্যানিটির তোলা তহবিল আর আমাদের বৈদেশিক তহবিল মিলিয়ে এই দ্বিতিয় পর্বে ৩০০ পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত হল। এরপর বাধা এলো, বাজার করে সব গুছিয়ে এগুলো সুষ্ঠু বিতরন করা। লাকীর একার পক্ষে সবার দ্বারে গিয়ে একাজ সম্ভব না।
তখন আলাপ করলাম আমার সৈনিক বাহিনী( সমাজ কর্মে) ড: গালিব রহমান কথন আর তার স্ত্রী ড: রাফিয়া জামান বন্নির সাথে। কথন আমার ছোট ভাই যে এ দূর্যোগে সামনের সারিতে চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছে সরকারী হাসপাতালে। রাত্রের ডিউটি থাকা সত্বেও সে আমার অনুরোধে বাজার বিতরনের পুরো দায়িত্বটা মাথা পেতে নেয়। বন্নি তার পাশে সদা প্রস্তুত। তাদের বন্ধু শাহীনকে নিয়ে ঢাকা উদ্যান নামক দিন মজুরের আবাসস্থলের এলাকাবাসীর নামের লিস্ট বের করে। শাহীনের বাসার নিচের তলায় বাজার জমা করে। তারপর আরো দুজন সহযোগী নিয়ে রাতের অন্ধকারে প্রত্যেকের ঘরের দরোজায় গিয়ে তারা চালডাল আর জরুরী বাজারের ব্যাগ বিতরন করে আসে।
লোকে যেন ভির না করে সে বিষয় লক্ষ্য রেখে তারা বাসা গ্যারেজেও নির্দিষ্ট দূরত্ব রেখে কিছু বিতরন কাজ করে।এই পুরা দায়ীত্বটা সুন্দর ভাবে সম্পন্ন করার জন্য আমরা মিশন হিউম্যানিটির কানিজ সুলতানা আর ড: গালিব রহমান, ড: রাফিয়া বন্নি, শাহীন ও কল্লোলকে অশেষ ধন্যবাদ জানাই।
বাঙালি কালচারাল সোসাইটির আরেক স্বপ্ন নিজের দেশের জন্য কাজ করা। নতুন প্রকল্প শেয়ারিং হোপ, যা “পাশে আছি” নামে বিশ্বের দুর্যোগের সময় দেশের খেটে খাওয়া মানুষের পাশে থাকতে পেরেছি। কানাডা, আমেরিকা, সৌদী, ইতালী, বিশ্বের আরো কত দেশ থেকে বাঙালীরা, বন্ধুরা সারা দিয়েছে আমাদের ডাকে। দাঁড়িয়েছে হাতে হাত মিলিয়ে যে যা পারে তাই নিয়ে- লক্ষ্য একটাই আমরা সবাই তোমাদের ‘পাশে আছি’।
একতার এক উজ্বল উদাহরন পাশে আছি। আমরা একসাথে এই দূর্যোগের সময় উত্তির্ন করবো। আমরা প্রস্তুত দ্বিতীয় পর্বের ত্রান পাঠানোর জন্য, সকলে সাথে থাকুন- পাশে থাকুন।
ফারহানা পল্লব, টরন্টো