মিল মালিক ও কাগজ ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কবলে দেশজুড়ে কাগজের সংকট দেখা দিয়েছে। দ্রুত এ সিন্ডিকেট দমন করে বিদেশ থেকে শুল্কমুক্ত কাগজ আমদানি করা না হলে আগামী বছর নির্ধারিত সময়ে শিক্ষার্থীদের হাতে পাঠ্যবই তুলে দেওয়া সম্ভব হবে না। একুশে বই মেলাসহ শিক্ষা ব্যবস্থায় স্থবিরতা তৈরি হবে। শিক্ষার্থীরা লেখার কাগজ পাবে না। এমনকি ডায়েরি-ক্যালেন্ডার ও কাগজের ব্যাগ তৈরির কাজও থমকে যাবে।
মঙ্গলবার (২৯ নভেম্বর) রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি এমন তথ্য তুলে ধরেছেন। লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মো. আরিফ হোসেন ছোটন।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, দেশের বাজারে মুদ্রণ এবং লেখার কাগজের সংকট তৈরি হয়েছে। একটি সিন্ডিকেট চন্দ্র এ পরিস্থিতি তৈরি করেছে। কাগজের যে আকাশচুম্বী মূল্যবৃদ্ধি ঘটেছে, তা স্বাধীন বাংলাদেশে অতীতের যেকোনো সময়কে ছাড়িয়ে গেছে। এটি ভয়াবহভাবে আকার ধারণ করেছে। আগামী বছরের কোটি কোটি শিক্ষার্থীর শিক্ষা জীবন বিঘ্ন ঘটবে, তেমনি ২০২৩ সালে অমর একুশে বই মেলায় বইয়ের দাম বেড়ে যাবে; প্রকাশকরা নতুন বই প্রকাশ করতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন।
তিনি বলেন, করোনা ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বেশি প্রভাব পড়েছে আমাদের কাগজের বাজারে। দেশের নানাবিধ প্রকাশনার মূল উপাদান এবং শিক্ষার প্রধান উপকরণ কাগজ। বিশ্ব বাজারে কাগজ তৈরির কাঁচামাল পাল্প ও পরিবহন ব্যয় বেড়েছে। যে পরিমাণে বেড়েছে তার চাইতে দুই থেকে আড়াইগুণ বিশ দাম দেশের কাগজ মিলগুলো আদায় করছে। এতে করে দেশের শিক্ষাঙ্গন ও প্রকাশনা শিল্পকে বিপর্যয়ের মুখে ফেলেছে। বিনামূল্যের পাঠ্যবই ছাপাতে গিয়ে সরকার বর্তমানে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছে।
বলা হয়েছে, ২০২১ সালে ৮০ গ্রাম অপসেট এক রিম কাগজের মূল্য ১৫০০ টাকা হলেও বর্তমানে দাম বেড়ে তা ৩০০০ টাকা হয়েছে। ১০০ গ্রামের একই কাগজ ১৭৫০ থেকে ৪২০০ টাকা দাঁড়িয়েছে। ২০ বাই ৩০ ইঞ্চি নিউজপ্রিন্ট কাগজের রিম ৩৮০ টাকা থেকে ১০০০ টাকা হয়েছে। অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিতে কোনও দুষ্টচক্রের ইন্ধন রয়েছে কিনা তা সরকারকে খতিয়ে দেখার আহ্বান জানানো হয়।
কাগজের বাজার স্বাভাবিক করতে তারা পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরেছেন। এসব দাবির মধ্যে রয়েছে- অস্বাভাবিক কাগজের দাম বৃদ্ধির কারণ তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করা, দ্রুততম সময়ে বিদেশ থেকে কাগজ আমদানিতে শুল্কমুক্ত ঘোষণা, দেশের সকল ক্ষেত্রে ব্যবহৃত কাগজকে রিসাইকেলিং কাজে ব্যবহার করার ব্যবস্থাকে স্বাভাবিক রাখা, কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ীর গুদামজাতকৃত কাগজ স্বাভাবিক মূল্যে বিক্রির ব্যবস্থা এবং শুল্ক হ্রাস/মুক্ত করা ছাড়াও অন্যবিধ কী ভর্তুকি বা প্রণোদনামূলক ছাড় দেওয়ার দাবি জানান তারা।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে সংগঠনের সহ সভাপতি শ্যামল পাল বলেন, বিশ্ববাজারে কাগজ তৈরির কাঁচামাল পাল্পের যে পরিমাণে দাম বেড়েছে তার চাইতে দুই থেকে আড়াইগুণ দাম মিল ও কাগজ ব্যবসায়ীরা আদায় করছে। তাদের মধ্যে একটি সিন্ডিকেট তৈরি হয়েছে। স্বল্প পরিমাণে পাল্প আমদানি করে কাগজের সংকট তৈরি করে চড়া দামে বিক্রি করছে।
তিনি বলেন, কাগজ সংকটের কারণে শিক্ষার্থীদের পাঠ্যবই তৈরি বন্ধ হয়ে গেছে। আগামী বই মেলায় নতুন বই প্রকাশনা কমে যাবে, মূল্য বাড়বে। শিক্ষার্থীদের সহায়ক বই, লেখার খাতাসহ বিভিন্ন কাজে ব্যবহারের জন্য কাগজ পাওয়া যাবে না।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন মাজহারুল ইসলাম, মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ, মির্জা আলী আশরাফ কাসেম, জ্ঞান ও সৃজনশীল পুস্তক প্রকাশক সমিতির সাবেক সভাপতি ওসমান গণি, সাবেক সভাপতি আলমগীর সিকদার লোটন প্রমুখ।