প্রিয় প্রধানমন্ত্রী
প্রজাতন্ত্রের সর্বাধিক সাধারণ কিন্তু অত্যন্ত গর্বিত এই নাগরিক রাশেদ কাঞ্চন বাংলাদেশ-এর সালাম নিন। আপনার নিরাপত্তা ও সুস্বাস্থ্য সর্বদাই কাম্য। আমি মনেপ্রানে বিশ্বাস রাখি জাতি, জাতীয় সুরক্ষা, সার্বভৌমত্ব এবং দেশের অগ্রগতির বিষয়ে আপনি কখনোই কোনও আপস করবেন না।
প্রিয় প্রধানমন্ত্রী
বহুমুখীভাবে আহরিত অর্থ যদি দেশেই স্থিতি লাভ করে, তাহলে স্বাভাবিকভাবে জাতীয় অর্থভাণ্ডার সমৃদ্ধ হয়। সেই অর্থ থেকে উন্নয়নমুখী নানা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা যায়। আর যদি বিভিন্ন অজুহাতে সেই অর্থ বিদেশে পাচার হয়ে যায়, তাহলে ক্রমান্বয়ে দেশের অর্থনীতি দুর্বল হয়ে পড়ে। একদিকে একশ্রেণির কথিত ব্যবসায়ী আমদানি ও রফতানির নামে বিদেশি ব্যাংকে অর্থ সঞ্চয় করছেন। অন্যদিকে অবৈধভাবে বিদেশি দক্ষ কর্মী নিয়োগের নামে বিদেশে চলে যাচ্ছে প্রচুর অর্থ। এইভাবে দিনের পর দিন দেশের অর্থনীতি কাক্সিক্ষত সমৃদ্ধি হারাচ্ছে।
প্রিয় প্রধানমন্ত্রী
সম্প্রতি প্রকাশিত এক সংবাদে বলা হয়েছে, অবৈধভাবে অবস্থান করা বিদেশি কর্মী নিয়োগের ফলে বছরে ২৬ হাজার ৪০০ কোটি টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশন্যাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ দাবি করেছে।
দেশের অর্থনীতির জন্য বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ অবশ্যই একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এই রিজার্ভ থেকে দেশের প্রয়োজনীয় যাবতীয় রফতানি ব্যয় মেটানো হয়। এছাড়াও অভ্যন্তরীণ অবকাঠামোগত উন্নয়নে এই মুদ্রা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে আর জাতীয় উন্নয়ন বাজেটে তো প্রশ্নাতীতভাবে অবদান রেখে চলেছে দেশের সমৃদ্ধ অর্থনীতি।
প্রিয় প্রধানমন্ত্রী
সাধারণত দুইভাবে দেশে আসে বৈদেশিক মুদ্রা। আমাদের প্রবাসী কর্মীদের পাঠানো রেমিট্যান্স থেকে প্রচুর পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আসে। আর রফতানি পণ্য থেকে বৈদেশিক মুদ্রার আরো একটা বড় অংশ আসে। কিন্তু যদি আমাদের কষ্টার্জিত এসব বৈদেশিক মুদ্রা ডলারে পরিণত হয়ে আবার বিদেশে চলে যায়, তাহলে দেশের জাতীয় পর্যায়ের অর্থনীতিতে যে নেতিবাচক প্রভাব এসে পড়বে, এতে কোনো সন্দেহ নেই।
আমাদের দেশের যে কর্মীরা বহির্বিশ্বে কর্মরত তার মধ্যে বেশিরভাগই অদক্ষ; এর মধ্যে রয়েছে স্বল্প পরিমাণ দক্ষকর্মী। এতে আমরা যে পরিমাণ জনশক্তি বিদেশে বিনিয়োগ করি, তার চেয়ে আহরিত বৈদেশিক মুদ্রা অনেক কম। সেই তুলনায় আমাদের নিকট প্রতিবেশী অনেক দক্ষিণ এশীয় দেশগুলো দক্ষকর্মী বিদেশে পাঠায়; আমাদের চেয়ে কম শ্রমশক্তি বিনিয়োগ করে ওই দেশগুলো বেশি বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে। এর পেছনে একমাত্র কারণ চাহিদামতো জনশক্তির দক্ষতা।
আমরা যেখানে বেশি জনশক্তি বিনিয়োগ করে, বেশি কষ্ট করে কম বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জন করছি, সেখানে দক্ষ জনশক্তির নামে এ দেশেই অবৈধভাবে অবস্থান করা বিদেশি কর্মীরা নিয়ে চলে যাচ্ছে আমাদের অর্জিত প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা। আর এই মুদ্রা যদি টাকার অঙ্কে বছরে হয় ২৭ হাজার কোটি, তাহলে সত্যি আশ্চর্য না হয়ে পারা যায় না।
প্রিয় প্রধানমন্ত্রী
এমনিতেই কালো টাকার মালিকরা আমাদের দেশ থেকে প্রচুর অর্থ বিদেশি ব্যাংকে জমা করে যাচ্ছেন। বিদেশে গড়ছেন ব্যবসা-বাণিজ্য, সেকেন্ড হোম। সবই সম্ভব হচ্ছে এই পাচার করা অর্থ দিয়ে। এভাবে যদি দেশের অর্থ নানা অজুহাতে বিদেশে চলে যায়, তাহলে দেশে অর্থনীতি আরো সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে যাবে কীভাবে?
বিদেশে চলে যাওয়া অর্থ দেশে ফেরাতে সরকার ইন্টারপোলের সহায়তা নেয়ার কথা বলেছে। আর যা-ই হোক, আর যেন অবৈধভাবে বিদেশে সহজে অর্থ না যেতে পারে, সে ব্যবস্থা আমাদের আগে গড়ে তুলতে হবে। তা না হলে আগামীর দিনগুলোতে এভাবে সহজ উপায়ে আমাদের কষ্টার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা পাচার হয়ে যাবে।
প্রিয় প্রধানমন্ত্রী
দেশের অর্থনীতিকে আরো সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে যেতে হলে এবং দেশকে উন্নতির শীর্ষ শিখরে নিতে হলে অবশ্যই সরকারকে মুদ্রাপাচারের পথগুলো বন্ধ করতে হবে। বিশেষ করে অবৈধভাবে অবস্থান করা বিদেশি কর্মীরা যে অর্থ নিয়ে যাচ্ছেন, এটা দ্রুত বন্ধ করতে হবে। তাহলে আমাদের কষ্টার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা সুরক্ষা পাবে এবং সেই সঙ্গে দেশ এগিয়ে যাবে উন্নয়নের সরল পথে।
প্রিয় প্রধানমন্ত্রী
আজ এ পর্যন্তই। আবারও আপনার সুস্থতা কামনা করছি। মহান সৃষ্টিকর্তা সর্বদাই আপনার সহায় হউন।
ইতি
রাশেদ কাঞ্চন বাংলাদেশ(প্রজাতন্ত্রের সর্বাধিক সাধারণ কিন্তু অত্যন্ত গর্বিত একজন নাগরিক)